নিউইয়র্ক     রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বঙ্গবন্ধু টানেলে যান চলাচল শুরু হতে পারে ফেব্রুয়ারিতে

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২২ | ০১:৪৮ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২২ | ০১:৪৮ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
বঙ্গবন্ধু টানেলে যান চলাচল শুরু হতে পারে ফেব্রুয়ারিতে

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ শেষ পর্যায়ে। নভেম্বরের শেষ বা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রকল্পটি উদ্বোধনের পরিকল্পনা করছে সরকার। তবে উদ্বোধন হলেও নদীর তলদেশের নির্মিত অবকাঠামোটির নিরাপত্তার স্বার্থে যান চলাচল শুরু করতে আরো কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে দেশে আগামী বছরের জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে টানেলটিতে যান চলাচল শুরুর লক্ষ্য রয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ)।

২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী টানেলের প্রথম টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন হয়। টানেলের ২ হাজার ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের প্রথম টিউব নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০২০ সালের ২ আগস্ট। একই বছরের ডিসেম্বরে কাজ শুরু করে সমদৈর্ঘ্যের দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজ শেষ হয় গত বছরের ৭ অক্টোবর। প্রধান দুই টিউবের বোরিং কাজ শেষের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল টানেলের দুটি টিউবের মধ্যে সংযোগকারী তিনটি ক্রস প্যাসেজ বা সংযোগ পথ নির্মাণকাজ। তিনটি সংযোগ পথের প্রায় ৯৯ শতাংশ কাজই শেষ হয়েছে। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৯১ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী মাসের মধ্যে আরো ৩-৪ শতাংশ কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে বিবিএর। এরপর টানেলটি উদ্বোধনের পর আনুষঙ্গিক কাজ শেষে টানেলটি আগামী ফেব্রুয়ারির শুরুতে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে টানেল উদ্বোধনের কাজ এরই মধ্যে এগিয়ে নিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। টানেলের উদ্বোধনকাজ সম্পন্নের জন্য গঠন করা হয়েছে ১৩টি উপকমিটি। গত সপ্তাহে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আলমগীর হুসাইন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে উপকমিটিগুলো গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে টানেলটি কয়েক মাস পরীক্ষামূলকভাবে পরিচালনা করতে চায় সেতু কর্তৃপক্ষ। এজন্যই যান চলাচল উন্মুক্ত করে দেয়ার আগে জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির শুরু নাগাদ পর্যন্ত সময় নেয়া হতে পারে।

সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানেলের ৯১ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগে মাসে ১ শতাংশ হার গতিতে কাজ এগিয়ে নেয়া হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখন তা দেড়-দুই শতাংশে তুলে এনেছে। বাকি কাজের বেশকিছু অংশ মূল টানেলের বাইরের দিকে। সে হিসেবে নভেম্বরের মধ্যেই প্রকল্পের আরো অন্তত ৪-৫ শতাংশ কাজ এগিয়ে নেয়া যাবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বিদেশী দাতা সংস্থার প্রকল্পের মেয়াদ ও অর্থছাড়ের সময়সীমার কারণে নভেম্বর বা ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ করার তাগাদা রয়েছে।

জানতে চাইলে সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) এবং উদ্বোধন-সংক্রান্ত গঠিত প্রথম কমিটির আহ্বায়ক মো. রূপম আনোয়ার বণিক বার্তাকে বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে। একটি মেগা প্রকল্প হিসেবে টানেলের নির্মাণকাজ শেষে উদ্বোধনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সুষ্ঠুভাবে উদ্বোধন সম্পন্ন করতে বেশকিছু কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি এরই মধ্যে কাজও শুরু করেছে। তবে ঠিক কোন সময়ে টানেলের উদ্বোধন হবে, সে বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। আগামী সপ্তাহে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী প্রকল্প এলাকা ভিজিট করে টানেল উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা করতে পারেন।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট তথ্যে জানা গিয়েছে, টানেলের বিদেশী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শেষ হলেও দেশী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ এখনো শেষ হয়নি। ফলে মূল টানেল উদ্বোধন হলেও এখনো টানেলের পূর্ব দিকে ৫ দশমিক ৩ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ এখনো চলমান। এছাড়া সার্ভিস এরিয়ার বাংলো, দুটি সেতুর ড্রেনেজের অভ্যন্তরীণ রোডের কাজ এখনো চলমান রয়েছে। টানেলের প্রয়োজনে ৩৭৯ দশমিক ৪৩ একরের মধ্যে ১৪ দশমিক ১৬৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। টানেলের নিরাপত্তার স্বার্থে স্ক্যানার বসানোর জন্য ভূমি জটিলতা নিরসন করে সেটি বাস্তবায়নের কাজও এখনো শেষ হয়নি। এ কারণে মূল টানেল প্রকল্পটি উদ্বোধন হলেও স্বাভাবিকভাবে যান চলাচল চালু করতে কিছুটা সময়ক্ষেপণ হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, প্রকল্পটির কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে আমরা চেষ্টা করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করে বরং মানসম্পন্ন কাজের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। এ কারণে উদ্বোধনের বিষয়টি নিয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত নেবে। তাছাড়া টানেল একটি বিশেষায়িত ও স্পর্শকাতর স্থাপনা হওয়ায় উদ্বোধনের পর পরই যানবাহন চলবে, এ রকম নয়। উদ্বোধন শেষে নিরাপত্তার স্বার্থে সেতু কর্তৃপক্ষ সময় নিয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে তবেই টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করা হবে।

প্রকল্প কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেলটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তবে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে প্রকৃত নির্মাণ ব্যয় কয়েকশ কোটি টাকা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। টানেলটি নির্মাণ করছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) লিমিটেড। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার নির্বাহ করছে ৩ হাজার ৯৬৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। চীনের অর্থায়ন রয়েছে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সূএ : বণিক বার্তা

শেয়ার করুন