তাইওয়ান নিয়ন্ত্রিত মাৎসু দ্বীপপুঞ্জের কাছে মহড়ার সময় চীনা যুদ্ধজাহাজ ছবি : রয়টার্স
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের যুক্তরাষ্ট্র সফরের জেরে তাইওয়ান সীমান্তে সামরিক মহড়া বাড়িয়েছে চীন। তাইওয়ান নেতা সফর থেকে ফিরে আসার একদিন পরই দ্বীপটি ঘিরে তিনদিনের মহড়া শুরু করেছে চীনা সামরিক বাহিনী। সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এ মহড়ার শান্তিপূর্ণ প্রতিক্রিয়া দেখানোর কথাও ব্যক্ত করেছে দেশটি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্যানুযায়ী, গতকাল ৪২টি যুদ্ধবিমান তাইওয়ান প্রণালির মূল মধ্যরেখা অতিক্রম করেছে। এ সময়ে তাইওয়ান সীমান্তের চারপাশে সামরিক তৎপরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে। ৫ এপ্রিল লস অ্যাঞ্জেলেসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন। বৈঠকটি ঘিরে চীনের নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশের পর এ মহড়া প্রত্যাশিত ছিল।
স্বশাসিত দ্বীপটিকে বরাবরই নিজস্ব অঞ্চল হিসেবে দাবি করে আসছে চীন। এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে দেশটি। পাশাপাশি বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছে। তবে চীনের দাবিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান ও আপত্তি করে আসছে তাইওয়ান।
চীনা সেনাবাহিনীর পূর্ব থিয়েটার কমান্ড এক বিবৃতিতে জানায়, এটি তাইওয়ানের স্বাধীনতাকামী বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী এবং বিদেশী সহযোগী বাহিনীর জন্য একটি গুরুতর সতর্কবার্তা। চীনের জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য এটি একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। তাইওয়ান প্রণালি এবং তাইওয়ানের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বে পরিকল্পনা অনুযায়ী, যুদ্ধ প্রস্তুতি টহল ও অনুশীলন করবে চীন।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, জে-১০, জে-১১এস এবং জে-১৬এস মডেলের ৪২টি চীনা যুদ্ধবিমান ও আটটি যুদ্ধজাহাজ দুই দেশের মধ্যবর্তী গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত অতিক্রম করার তথ্য পাওয়া গেছে। মন্ত্রণালয় বলেছে, চীন সাই ইং-ওয়েনের সফরকে সামরিক তৎপরতা চালানোর একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। এ ধরনের কার্যক্রম আঞ্চলিক নিরাপত্তা, শান্তি এবং স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
এ মহড়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করার পর তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কোনো ধরনের বিরোধ সৃষ্টি না করে ধীরস্থির, যৌক্তিক ও গুরুতর মনোভাব নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবে তারা। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা অঞ্চলে চারটি চীনা যুদ্ধবিমান দেখা গেছে। তবে এ সংখ্যা অস্বাভাবিক নয়।
চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির অফিশিয়াল সংবাদপত্র দ্য পিপলস ডেইলি জানিয়েছে, তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতার যেকোনো চেষ্টাকে ব্যর্থ করার শক্তিশালী ক্ষমতা রয়েছে দেশটির। জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা চীনের বৈধ ও আইনি অধিকারের অন্তর্গত।
প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন বরাবরই বেইজিংয়ের সার্বভৌমত্বের দাবিকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। তিনি বারবার আলোচনার প্রস্তাব দিলেও বেইজিং তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে অভিহিত করে প্রত্যাখ্যান করেছে। সাই ইং-ওয়েনের মতে, শুধু তাইওয়ানের জনগণই নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনকে আতিথেয়তার অভিযোগে দুটি মার্কিন সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক হাডসন ইনস্টিটিউট ও ক্যালিফোর্নিয়ার রোনাল্ড রিগ্যান প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত। নিষেধাজ্ঞার ফলে প্রতিষ্ঠান দুটি চীনের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা, বিনিময় বা লেনদেন করতে পারবে না।