প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:১১ অপরাহ্ণ
ফলো করুন-
নিউইয়র্ক : কোভিড প্যান্ডেমিকের কারণে প্রায় তিন বছর বিরতির পর মুসলিম উম্মাহ নর্থ অফ আমেরিকা (মুনা) পরবর্তী কনভেনশন-এর আয়োজন করছে আগামি ২০২৩ সালের ১৮-২০ আগষ্ট যথাক্রমে শুক্র, শনি ও রোববার পেনসিলভেনিয়া কনভেনশন সেন্টারে । ‘আল-কোরআন গাইডেন্স ফর হিউম্যানিটি’ মূল থিম নিয়ে তিনদিনব্যাপী মুনা কনভেনশন এর প্রাথমিক সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে এবং আগামী দিনগুলোতে কনভেনশন বিষয়ক অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
জ্যাসকন হাইটসের একটি পর্টি হলে সোমবার গত সোমবার সন্ধ্যায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মুনা নেতৃবৃন্দ সম্মেলন বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুনা’র ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর ও মুনা কনভেনশন-২০২৩ এর চেয়ারম্যান আরমান চৌধুরী সিপিএ।
এসময় উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মুনা’র ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট হারুন অর রশীদ। মুনা’র মজলিশ শুরা মেম্বার এম এম মাওলা সুজন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
মুনা’র মজলিশ শুরার অন্যতম মেম্বার আব্দুল্লাহ আল আরিফ-এর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করা হয়। এরপর হামদ-নাত ও ইসলামের আলোকে সঙ্গীত পরিবেশন করেন আরাফাত রহমান এবং কবিতা পাঠ করেন নাসির উদ্দিন ও আবুল বাসার।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয় : এই কনভেনশন মুসলিম জীবনে বিশেষ করে ইধহমষধফবংযর-অসবৎরপধহ পরিবারের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। মুনা আমেরিকার একটি দাওয়াতি ও সামাজিক সংগঠন। মানুষের ব্যক্তিগত নৈতিক ও সামাজিক মানোন্নয়নর জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা চালানোর মাধ্যমে আলাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে প্রতিষ্ঠিত হয়। মুনা। এই সংগঠনটি ১৯৯০ সালে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে কর্পোরেশন ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে মুনা আমেরিকার ৪০ এর অধিক রাজ্যে কর্মতৎপরতা পরিচালনা করছে। মুসলমানদের প্রাত্যহিক সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মকান্ড এবং জাতীয় নাগরিক জীবনে ভূমিকা পালনের নিমিত্তে সংগঠিত করতে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে করে এই সমস্ত ব্যক্তিবর্গ আলাহ এবং তাঁর রসূল হযরত মুহাম্মদ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামের অনুসরণের মাধ্যমে মানবতার সেবা করে যেতে পারে।
কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের সার্বিক সহযোগিতায় সর্বোপরি মহান আলাহর অশেষ রহমতে, বিগত বছরগুলোতে যাবৎ বিশাল আকারের মুনা কনভেনশন বাস্তবায়ন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। তিন দিনব্যাপী ওই কনভেনশন বাংলাদেশি কমিউনিটি সহ আমেরিকান আমেরিকান মুসলিম কমিউনিটির মাঝে ব্যক্তি এবং সমাজ গঠনে প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। আমরা মুনা ন্যাশনাল সংগঠনের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে এবং আপনাদের মাধ্যমে গোটা বাংলাদেশী কমিউনিটি কে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। এবারের কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয় এবং থিম নির্ধারণ করা হয়েছে আল-কোরআন গাইডেন্স ফর হিউম্যানিটি – অষ-ছঁৎধহ মঁরফধহপব ভড়ৎ ঐঁসধহরঃু আল-কোরআন পথনির্দেশ করে গোটা মানব জাতিকে। কল্যাণকর ও নির্ভুল পথ পরিদর্শন করে পথভ্রান্ত দিকহারা মানবতাকে। ব্যক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন, মানব দেহের অভ্যন্তরে লুকায়িত অন্তর বিন্দু থেকে সৃষ্টি লোকের বিশাল বিস্তৃত মানব সম্পর্কিত প্রতিটি স্তরে বিশ্ববাসীর কল্যাণে এক নির্ভুল গাইড হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে এই গ্রন্থ। এটা বিজ্ঞানময় এটা অলৌকিক পরিবর্তনের প্রতিশ্রæতি। এটা একজন বিশ্বাসী মানুষের বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ব্যক্তি পরিবার এবং সমাজ পরিবর্তনের একমাত্র শাশ্বত চ্যালেঞ্জিং বিধান। এটি শুধু মুসলিম তথা ইসলামে বিশ্বাসী দের জন্য নয় এটা গোটা মানব গোষ্ঠীর উন্নতি ও অগ্রগতির সোপান। এই মহাগ্রন্থের কল্যাণকর পতাকা প্রতিটি হৃদয়ে, প্রতিটি ঘরে , প্রতিটি সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে পৌঁছে যাক মুনা এই বিশ্বাস ধারণ করেই এবারের কনভেনশনে মূল কেন্দ্রীয় প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করেছে। এই কাজে আপনাদের এবং আপনাদের মাধ্যমে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি ।
মুসলিম উম্মাহ অফ নর্থ আমেরিকা (মুনা) একটি ফেইথ বেইজড দাওয়াতি ও সামাজিক সংগঠন। একটি দাওয়াতি সংগঠন হিসাবে মুনা মুসলমানদেরকে আহবান করে তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ইসলাম পালনের এবং অমুসলিমদের কাছে ইসলামের সঠিক শিক্ষা তুলে ধরতে ।
একটি অলাভজনক সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে মুনা আমেরিকা কিংবা বিদেশে কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। নিজস্ব স্বতন্ত্র সংবিধান এবং কর্মসূচি ও কর্মপদ্ধতির আলোকেই এই সংগঠনটি পরিচালিত হয়েছে জন্মলগ্ন থেকে । মুনা প্রধানত ঐ সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে যাতে করে একজন ব্যক্তিকে সংশোধনের মাধ্যমে সর্বাঙ্গীণ সামাজিকভাবে কল্যাণকর ব্যক্তিতে পরিণত করা যায়। এ লক্ষ্যে মুনা ব্যক্তিদেরকে আধ্যাত্মিক নৈতিক এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। মুনা চায় এমন সব প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ উন্নয়ন যারা তাদের স্রষ্টা ও প্রতিপালক আলাহ তায়ালার সাথে সম্পর্কের সুসামঞ্জস্য রক্ষা করে চলে এবং একই সময়ে সমাজের সর্বক্ষেত্রে উৎপাদনমুখী ভূমিকা পালন করে।
মুনা সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক ষান্মাসিক এবং বার্ষিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের ও পর্যায়ের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে; যাতে শিক্ষাদান করা হয় ইসলামের বিভিন্ন দিক ও বিভাগ এবং মানুষের দৈনন্দিন সাধারণ সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবন সম্পর্কিত বিষয়াবলী । মানুষের ব্যক্তিগত মানোন্নয়ন ছাড়াও মুনা স্থানীয় ও জাতীয় জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নানা সামাজিক ও নাগরিক অধিকার সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে থাকে । নিজেদের স্বার্থ ও সামর্থ্য অনুযায়ী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের কে বিভিন্ন ধরনের ধাতব ও সমাজকল্যাণ মূলক কর্মকান্ডে প্রতিনিয়ত এরই অংশ হিসেবে ছোট ছোট কর্মসূচির পাশাপাশি ঘধঃরড়হ-ডরফব আয়োজন করছে এই মুনা কনভেনশন ২০২৩। এবারের কনভেনশনে আমাদের টার্গেট ২০ হাজার লোকের সমাগম। এই টার্গেট বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি ।
মুনা নিজের সদস্য ও অন্যান্য মুসলিম দেরকে নিয়ে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিতে চায় যাতে করে তারা অন্য ধর্মাবলম্বী অভিন্ন ভাষাভাষী বর্ণ ও গোত্রের জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবেশীদের সাথে পারস্পরিক সংলাপে নিয়োজিত হতে পারে, যার মাধ্যমে অন্ত ও আন্ত সা¤প্রদায়িক বোঝাপড়া সামাজিক প্রসার ও উন্নয়ন ঘটানো যায়। মুনা মনে করে, এ প্রক্রিয়ায় এই সমাজের সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব। এবারের কনভেনশন এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
মুনা একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও রাজনীতি সম্পর্কে উদাসীন বেখবর কোন দল নয়। মুনা চায় রাজনৈতিক বিষয়াবলীতে নাগরিকগণ সচেতনভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং এর ফলে রাষ্ট্রীয় জীবনে সুচারু সিস্টেম বহাল থাকে। মুনা চায় বিশ্বকে নেতৃত্ব দানকারী এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনশক্তি এবং অন্যান্য নাগরিকগণ বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সাথে সক্রিয় যোগাযোগ রক্ষা করে চলুক যাতে করে তাদের কথা শোনা হবে এবং তাদের অধিকার রক্ষা করা যাবে এবং তাদেরকে বৈষম্যের রাজনৈতিক জীবনের এক প্রান্তে ঠেলে দিয়ে উপেক্ষা করা হবে না।
মুনা আমেরিকায় জাতীয় ভিত্তিক সংগঠন হলেও উনার প্রাথমিক ফোকাস হচ্ছে বাংলা ভাষাভাষী তথা ইধহমষধফবংযর-অসবৎরপধহ কমিউনিটি। মুনা প্রধানতঃ বাংলা ভাষাভাষীদের মাঝে এর কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে। এদের দুনিয়াবী ও পরকালীন কল্যাণ নিশ্চিত করতেই মুনা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই দেশে বাংলাভাষাভাষী মুসলিমরা ও অন্যান্যরা কিভাবে এখানকার মুলধারার জীবনে অংশগ্রহণ করে নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করবে এবং একই সাথে নিজেদের আধ্যাত্মিক নৈতিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার এর সংরক্ষণ করবে সেই বিষয়ে সচেতন। আর তাই মুনা চায় বাংলাদেশী-আমেরিকানরা কর্মতৎপরতায় বেশি বেশি করে সক্রিয় অংশগ্রহণ করুক। সাথে সাথে বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে গড্ডালিকা প্রবাহ থেকে বাঁচাতে মুনা চায় প্রতিটি বাংলা ভাষাভাষী অভিভাবক তাদের সন্তানকে মুনা ইয়ূথ এবং ইয়ং সিস্টার অফ মনার সাথে সম্পৃক্ত করুক । মুনা চায় বাংলাদেশি আমেরিকানদের আমেরিকার মূল ধারার মুসলিম স্কলার ও নেতৃবৃন্দের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং পূবের বর্ণিত মুনা কর্মকাণ্ডের কিছু প্রায়োগিক দিক কে পরিচয় করিয়ে দিতে। আর এজন্য ভূমিকা রাখবে মুনার এবারের কনভেনশন ২০২ ৩। আমেরিকায় ব্যক্তি পরিবার ও সমাজ গঠনে দিকনির্দেশনা সম্বলিত আলোচনা রাখবেন বিশ্ব বিখ্যাত সুপরিচিত অভিজ্ঞ আলোচকবৃন্দ। এবারের ইংরেজি আলোচকদের সাথে সাথে থাকবেন বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশ থেকে আগত বাংলা ভাষার ইসলামিক স্কলার গণ।
প্রতিবারের মতো এবারও রয়েছে তরুণ ছেলে মেয়েদর জন্য আলাদা ইয়ূথ কনভেনশন এবং ইয়ং সিস্টার্স কনভেনশন। আল-কোরআনের অনুসারে কল্যাণকর জীবন জাপনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগের উপর প্যারালাল গ্রোগ্রাম রয়েছে । আলোচনা ছাড়া থাকবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিভিন্ন ইসলামী ও অন্যান্য সামগ্রীর দোকান নিয়ে বিশাল বাজার। ছোট ছেলে মেয়েদের জন্য শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান লার্ন এন্ড ফান। এবং বিভিন্ন খেলাধুলা রাইড এর ব্যবস্থা। এছাড়া ফিলাডেলফিয়া ভ্রমণকারীদের জন্য থাকবে আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতিবহুল ভ্রাতৃপ্রতিম ভালোবাসার শহর নানা দর্শনীয় স্থান পরিবহন ও পরিদর্শনের সুযোগ সর্বোপরি, পরিবার-পরিজন বন্ধু স্বজন আর গোটা আমেরিকা থেকে আসা বাংলা ভাষাভাষীদের এই সর্ববৃহৎ মিলনমেলায় অংশগ্রহণের সুবর্ণ সুযোগ।