পৃথিবীর বাইরের কোনো গ্রহে পানির অস্তিত্ব থাকার বিষয়টি এত দিন তত্ত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এবার একদল মহাকাশ বিজ্ঞানী বেশ আওয়াজ দিয়েই বলছেন, পানি আছে—এমন দুটি গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন তারা। আর এমন দাবিতে নড়েচড়ে বসেছেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গবেষকরা।
গত বৃহস্পতিবার বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার অ্যাস্ট্রোনমিতে এক প্রতিবেদনে গবেষকরা দাবি করেছেন, পৃথিবীর সৌরজগৎ থেকে প্রায় ২১৪ আলোকবর্ষ দূরের এক সৌরজগতে কেপলার-১৩৮সি এবং কেপলার-১৩৮ডি নামে গ্রহ দুটির অবস্থান। একটি লাল বামন নক্ষত্র ঘিরে চক্কর দিচ্ছে গ্রহ দুটি। এ আবিষ্কারে ভূমিকা রেখেছে নাসার হাবল আর অবসের থাকা স্পিটজার টেলিস্কোপ।
গবেষণা প্রতিবেদনের সহলেখক ইউনিভার্সিটি অব মন্ট্রিয়ালের অধ্যাপক বিয়র্ন বেনেকি বলেন, ‘আমাদের আগের ধারণা ছিল, পৃথিবীর চেয়ে আকারে কিছুটা বড় গ্রহগুলো আদতে পাথর বা বড় আকারের ধাতব বল ছাড়া কিছু নয়। এ কারণেই ওই গ্রহগুলোকে আমরা সুপার আর্থ বলে ডাকতাম। আমরা এবার প্রমাণ দেখিয়েছি, ওই গ্রহ দুটি অনেকটাই ভিন্ন। এদের আয়তনের একটা বড় অংশজুড়ে সম্ভবত পানি। তবে, সম্ভবত নীল সাগর নয়, উত্তপ্ত বায়ুমণ্ডলে ভেসে বেড়ানো জলীয় বাষ্প ঢেকে রেখেছে গ্রহ দুটিকে।’
গবেষক দলের প্রধান এবং ইউনিভার্সিটি অব মন্ট্রিয়ালের ক্যারোলিন পলেট বলেন, ‘গ্রহ দুটির বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা সম্ভবত ফুটন্ত পানির চেয়েও বেশি এবং আমরা গ্রহ দুটিতে ঘন জলীয় বাষ্পের স্তর প্রত্যাশা করছি।’ জলীয় বাষ্পের বায়ুমণ্ডলের নিচে তরল পানি থাকার সম্ভাবনাও ফেলে দিচ্ছেন না গবেষকরা। কেপলার জুটিকে তারা তুলনা করছেন বৃহস্পতি আর শনির চাঁদ ইউরোপা আর এনসেলাডাসের সঙ্গে।
টেলিস্কোপে সরাসরি নীল পানি চোখে পড়েনি মহাকাশ বিজ্ঞানীদের। তবে, গ্রহগুলোর আকার ও ভর নির্ধারণের জন্য যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন তারা। সে তথ্য নিয়ে পরীক্ষাগারের মডেলের সঙ্গে বিচার করে গবেষকরা বলছেন; গ্রহ দুটির আয়তনের একটি বড় অংশ গঠিত হয়েছে পাথরের চেয়ে হালকা; কিন্তু হাইড্রোজেন বা হিলিয়াম গ্যাসের চেয়ে ভারী কোনো উপাদান দিয়ে। সে কারণেই পানির কথা আসছে।