নিউইয়র্ক     সোমবার, ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুতিনের ভয়ে ভীত নয় যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো মিত্ররা- বাইডেন

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২২ | ০২:০৮ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২২ | ০২:০৮ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
পুতিনের ভয়ে ভীত নয় যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো মিত্ররা- বাইডেন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। তিনি বিশ্ববাসীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল দখল করে নিয়েছেন। এতে তীব্র এক উত্তেজনা বিরাজ করছে ওই অঞ্চলে। যেকোনো সময় শুরু হয়ে যেতে পারে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার। এতে আতঙ্কিত সব মানুষ। পুতিনকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি রাশিয়াকে সতর্ক করেছেন। বলেছেন, পুতিনের বেপরোয়া হুমকিতে ভীত হবে না যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল লুহানস্ক, দনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া, খেরসন দখল করে নেয়ার ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন পুতিন। এর মধ্য দিয়ে তিনি এসব অঞ্চলকে রক্ষায় পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছেন।

ওইসব অঞ্চল সম্পর্কে পুতিন বলেন, এ অঞ্চলগুলো চিরদিনই রাশিয়ার। অন্যদিকে বেদখলে যাওয়া অঞ্চলগুলো উদ্ধারে প্রত্যয় ঘোষণা করেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর ওই অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণা দেয়াকে সবচেয়ে ভয়াবহ উস্কানি হিসেবে অভিহিত করেছেন ন্যাটো প্রধান জেন্স স্টোলটেনবার্গ। ওদিকে দ্রুত ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

ইউক্রেনের অঞ্চলগুলো দখল করে নেয়ার ঘোষণায় স্বাক্ষর করার পর মস্কোতে ভাষণ দেন পুতিন। তিনি বলেন, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দনেৎস্ক এবং লুহানস্ক, দক্ষিণে খেরসন এবং জাপোরিঝিয়ার জনগণ তাদের নাগরিকদের সঙ্গে, তাদের মাতৃভূমির সঙ্গে যুক্ত হতে ভোট দিয়েছে। কথিত গণভোটের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন তিনি এ কথা বলেন। কিন্তু এই গণভোটকে ‘লজ্জার’ বলে এর নিন্দা জানিয়েছে ইউক্রেন এবং পশ্চিমা সরকারগুলো। ইউক্রেনের অঞ্চলগুলোকে পুতিন এখন রাশিয়ার ঘোষণা দিলেও পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, তারা কখনো পুতিনের এই ঘোষণাকে স্বীকৃতি দেবে না। তবে ভাষণে পশ্চিমাদের কড়া সমালোচনা করেছেন পুতিন।

তিনি বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে জাপানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে নজির সৃষ্টি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তার এ মন্তব্যকে অনেকেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি হিসেবে দেখছেন। গত সপ্তাহে পুতিন বলেছেন, বিভিন্ন রকম ধ্বংসাত্মক অস্ত্র আছে তার কাছে। বলেন, হাতের কাছে যা আছে তার সবটাই ব্যবহার করা হবে। এ নিয়ে আমি কোনো ছলচাতুরি করছি না। ক্রেমলিন পরিষ্কার করে বলেছে যে, রাশিয়া যে অঞ্চলকে নিজের বলে স্বীকৃতি দিয়েছে, সেখানে কোনো রকম হামলা হলে, তাকে রাশিয়ার মাটিতে হামলা হিসেবে দেখা হবে। এর ফলে যুদ্ধ আরও উত্তেজিত হয়ে উঠবে বলে ইঙ্গিত মিলছে।

তবে এখনও দখলে নেয়া চারটি অঞ্চলের কোনোটিতেই পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেনি রাশিয়া। শুক্রবারের ভাষণে নতুন সীমান্ত সম্পর্কে পরিষ্কার কোনো কথা বলেননি পুতিন। কিন্তু তার বক্তব্যকে বেপরোয়া এবং হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, পুতিন আমাদের ভয় দেখাতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্ররা ভয়ে ভীত হচ্ছে না। এরপরই সরাসরি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন জো বাইডেন। তিনি ক্যামেরার দিকে নিজের আঙ্গুল তুলে বক্তব্য দেন। বাইডেন বলেন, ন্যাটোভুক্ত ভূখণ্ডের প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা রক্ষা করতে পুরোপুরি প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র ও আমাদের ন্যাটো মিত্ররা। তিনি আবারও বলেন, আমি বলছি প্রতিটি ইঞ্চি জায়গার কথা।

এর সামান্য পরে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, মস্কো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। তবে দৃশ্যত তা তাৎক্ষণিক হুমকি নয়। আগেই বলা হয়েছে, পুতিনের বক্তব্যর পর পরই ন্যাটোতে দ্রুততার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে ইউক্রেন। দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ডিফেন্স কাউন্সিলের সঙ্গে সংকটকালীন বিশেষ বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, নিরাপত্তা ব্লকের (ন্যাটো) সব সময়ই একটি ‘ডি-ফ্যাক্টো’ সদস্য কিয়েভ। মস্কো তার দেশের সীমান্তে হত্যা, ব্লাকমেইল, দুর্ব্যবহার ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নতুন করে সীমান্ত নির্ধারণ করছে। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে দক্ষিণের দ্বীপাঞ্চল ক্রাইমিয়াকে দখল করে নেয় রাশিয়া। সেই ক্রাইমিয়া সহ ইউক্রেনের সব ভূখণ্ডকে দখলমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন জেলেনস্কি। একই সঙ্গে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আর কোনো সমঝোতা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তবে ভোলোদিমির জেলেনস্কি ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার যে দ্রুত পদক্ষেপের কথা বলেছেন, তা বাস্তবায়নে অনীহা প্রকাশ করেছেন জেন্স স্টোলটেনবার্গ। তিনি বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত ন্যাটোর ৩০টি সদস্যের ওপর নির্ভর করে। যেসব অঞ্চলকে রাশিয়া দখল করেছে তাকে কখনো স্বীকৃতি দেয় না এই ব্লকের সদস্যরা, দেবেও না। পুতিন দায়িত্বহীনের মতো পারমাণবিক উত্তেজনা সৃষ্টি করছেন বলে তিনি তাকে অভিযুক্ত করেন।

রাশিয়ার সম্প্রসারণ বা জায়গা দখলকে যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত বলে অভিহিত করেন তিনি। পুতিনের এই অবৈধ সম্প্রসারণ কোনো কিছুই পরিবর্তন করবে না বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন। তার ভাষায়, রাশিয়ার আগ্রাসীরা ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল অবৈধভাবে দখল করেছে তা ইউক্রেনের অংশ। তা সব সময়ই সার্বভৌম ইউক্রেনের অংশ হয়ে থাকবে। একই রকম মন্তব্য করেছে তুরস্ক। তারা বলেছে, রাশিয়ার এই সম্প্রসারণ আন্তর্জাতিক আইনের ভয়াবহ লঙ্ঘন। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে, এই সম্প্রসারণকে স্বীকৃতি দেবে না তারা। একই সঙ্গে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব, ভূখণ্ডগত নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা সুরক্ষিত রাখা উচিত। শুক্রবার যখন মস্কোতে বক্তব্য রাখছিলেন পুতিন তখন তার বাহিনীকে লিম্যানে চারদিক থেকে ঘেরাও করে রেখেছিল ইউক্রেনের বাহিনী। লিম্যান হলো দনেৎস্ক অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এক শহর।

পরিচয়/সোহেল

শেয়ার করুন