বেশ মনে পড়ে মফস্বলে থাকার সময় আম্মু ও তার বন্ধুরা মিলে পয়লা বৈশাখ উদযাপনের আয়োজন করতেন। মহিলাদের যে ক্লাব থাকে, সেখানে আয়োজন হত। আমরা বৈশাখী মেলায় যেতাম, যেটা এখন ভীষণ মিস করি। ওই মেলা একটা অন্যরকম ভালোলাগার জায়গা ছিল। মেলায় অনেক কিছু পাওয়া যেত, সেখান থেকে বিভিন্ন জিনিস কেনা দারুণ আনন্দের ছিল।
এবার জরুরি প্রয়োজনে আমায় দেশের বাইরে আসতে হয়েছে। পয়লা বৈশাখের দিন এবার তাই বাংলাদেশে থাকতে পারছি না। প্রত্যেকবারের বাংলাদেশে যেভাবে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করি, দুর্ভাগ্যবশত সেটা এবার হবে না। এখান যেখানে আছি সেখানে হয়তবা শাড়ি পরা হবে না, তবে সালোয়ার কামিজ অবশ্যই পরব। তার উপর এবার যেহেতু রোজা চলছে তাই এবার এখানে নববর্ষ উদযাপনে কিছুটা ভাটা পড়বেই। তাও যতটা সম্ভব হবে, ততটুকু উপভোগ করার সুযোগ ছাড়ব না।
পয়লা বৈশাখের স্মৃতি আমার কাছে এক একটা বয়সে এক এক রকম ছিল। এটা আসলে এমন একটা অনুষ্ঠান, যেটা ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সবার উৎসব। আর তাই এটা আমার কাছে এতটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং এটাই এই উৎসব নিয়ে আমার ভালো লাগার একটা অন্যতম কারণ। এই উৎসবে আমার দেশের সব মানুষ একই রকম উদযাপনে মেতে ওঠেন, এটা কোনো ধর্মীয় উৎসব নয়। এছাড়া ঈদ, পূজা, বুদ্ধপূর্ণিমা, বড়দিন, সবই তো ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের। তবে পয়লা বৈশাখ সবার উৎসব। এই উৎসব আসলে আপামর বাঙালির।
পয়লা বৈশাখে সকলে একই রকম শাড়ি পরেন, এই দিনে ঢাকার রাস্তা তাই দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগে। ছোট থেকে বড় সমস্ত ধরনের মানুষ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই এই উৎসব উদযাপন করেন, আর সেটা বেশ আনন্দের সঙ্গেই। আমার ছোটবেলার পয়লা বৈশাখ অবশ্য একটু অন্য রকমভাবেই কাটত। বাবার কর্মসূত্রে আমার ছোটবেলা কেটেছে মফস্বলে। কারণ, আমার বাবা সরকারি চাকরি করতেন, উনি বাংলাদেশের পানী উন্নয়ন বোর্ডে ছিলেন। তাই বিভিন্ন জেলা শহরে আমরা থেকেছি।
বেশ মনে পড়ে মফস্বলে থাকার সময় আম্মু ও তার বন্ধুরা মিলে পয়লা বৈশাখ উদযাপনের আয়োজন করতেন। মহিলাদের যে ক্লাব থাকে, সেখানে আয়োজন হত। আমরা বৈশাখী মেলায় যেতাম, যেটা এখন ভীষণ মিস করি। ওই মেলা একটা অন্যরকম ভালোলাগার জায়গা ছিল। মেলায় অনেককিছু পাওয়া যেত, সেখান থেকে বিভিন্ন জিনিস কেনা দারুণ আনন্দের ছিল। আর এখন তো কাজের সূত্রে সারা বছরই এখানে ওখানে যাই। বিভিন্ন কিছু কিনি।
আর একটা বিষয় আমার মানতে ভালো লাগে যে,বছরের শুরুর দিনটা যেভাবে কাটে, সারা বছরই তেমন কাটবে। তাই চেষ্টা করি আনন্দের সঙ্গে এই দিনটা কাটানোর। তবে এখন আমার শহরকেন্দ্রীক জীবন। মিডিয়ায় কাজের সুবাদে কয়েকজন ভাইয়া, আপু আছেন, তাঁরা সকলে মিলে এখন পয়লা বৈশাখ উদযাপনের আয়োজন করেন। আমি আমার মেয়ে একই রকম শাড়ি পরি, তবে এবার সেটা হচ্ছে না। নববর্ষের ফ্যাশান বলতে আমার কাছে লাল-সাদা শাড়ি, কেউ একটু অন্যরকম শাড়ি পরলেও সাদা-লাল তাতে থাকেই, তাই বাংলাদেশের রাস্তাঘাট এই দিনটিতে দেখতে অন্যরকম লাগে। সকলেই এদিন একই রঙে রঙিন হন, যেটা দেখতে ভীষণই সুন্দর। হিন্দুস্থান টাইমস থেকে