নিউইয়র্ক     বুধবার, ১৯শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৫ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধারাবাহিকভাবে কমছে বাংলাদেশের রিজার্ভ, বাড়ছে দুশ্চিন্তা

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২২ | ০১:১০ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২২ | ০১:১০ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
ধারাবাহিকভাবে কমছে বাংলাদেশের রিজার্ভ, বাড়ছে দুশ্চিন্তা

মৃত্তিকা সাহা : দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে। ফলে দুশ্চিন্তাও বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ আরো কমে ৩৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে, যা ২০২০ সালের ২৮ জুলাইয়ের পর সবচেয়ে কম।

গত ২১ সেপ্টেম্বর বুধবার দিন শেষে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকের পরিমাণ ছিল ৩৬ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আগের দিন মঙ্গলবার যা ৩৭ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিল। যদিও গত বছরের আগস্টে এই সূচক অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল।

মূলত বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রির ফলে রিজার্ভে এমন নেতিবাচক দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি রপ্তানি আয়ের বিপরীতে উচ্চ আমদানি ব্যয় পরিশোধের পর দেশের রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

কর্মকর্তারা বলেন, আমদানি বিল পরিশোধের সুবিধার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক ২১ সেপ্টেম্বর বুধবার বেশ কয়েকটি ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ থেকে ৭ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। সে কারণেই রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে।

এদিকে, ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ কমায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার মগবাজার এলাকার একজন গৃহকর্মী এই প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান, তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করা টাকা নাকি ফেরত পাওয়া যাবে না?

এমন কথা কোথায় শুনেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, টিভিতে দেখাচ্ছে এবং রাস্তায় সব মানুষ বলাবলি করছেন। রিজার্ভ কমার সঙ্গে ব্যাংকে রাখা টাকার নিরাপত্তার কোনো সম্পর্ক নেই-বিষয়টি বুঝিয়ে বলার পর তিনি আশ্বস্ত হয়েছেন।

জানা গেছে, আমদানি দায় পরিশোধ বাবদ গত জুলাইয়ে ৫৮৬ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে। এ হিসাবে বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে ৬ মাসের আমদানি দায় নিষ্পত্তি করা সম্ভব।

অবশ্য আইএমএফের মানদণ্ড বিবেচনায় নিলে দেশের রিজার্ভ এখন ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে। বিভিন্ন তহবিলে জোগান দেওয়া অর্থ বাদ দিয়ে যে রিজার্ভ আছে, তা প্রায় ৫ মাসের আমদানি দায়ের সমান।

এই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রিজার্ভ কিছুটা কমলেও এখনই দুশ্চিন্তার কারণ নেই। তবে আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কেননা আমাদের বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে চার মাসের মতো আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

তিনি বলেন, আমাদের রেমিট্যান্স বাড়াতে এবং রফতানি আয় বাড়াতে হবে। সম্প্রতি আমাদের জনশক্তি রপ্তানির পরিমাণ অনেক বেড়েছে। ফলে রেমিট্যান্স আরো বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।

এছাড়া, রপ্তানি আয় বাড়াতে পণ্য বৈচিত্র্য করণসহ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। একইভাবে আমদানি ব্যয় কমাতে বিলাস জাত পণ্যে শুল্ক আরোপসহ সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সব মিলিয়ে রিজার্ভ নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই।

এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে বর্তমানে এক ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছি আমরা। তবে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে আমদানি ব্যয় বেশ কিছুটা কমে এসেছে। সেইসঙ্গে রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্সও বাড়ছে। ফলে খুব শিগগিরই এই সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারব বলে আশা করছি।

গত ৮ সেপ্টেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-আগস্ট মেয়াদের ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার আমদানির বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩৭ দশমিক শূন্য ছয় বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ২৬ মাস (দুই বছর দুই মাস) পর রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নামে।

এর আগে, ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ব্যাপক উল্লম্ফন ঘটে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেকর্ড ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসে। আবার রপ্তানিতেও ১৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি ছিল। যে কারণে ২০২০ সালের শুরুর দিকে ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে থাকা রিজার্ভ বেড়ে গত বছরের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৩৬ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে ২০২০ সালের ৩০ জুন। ২০২০ সালের ২৯ জুলাই রিজার্ভ ৪৭ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে ৪৭ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় এই রিজার্ভ কমতে কমতে গত ১২ জুলাই ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। গত দুই মাসে তা আরও কমে ৩৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই ধারাবাহিকতায় গত বুধবারও কয়েকটি ব্যাংকের কাছে সরকারি কেনাকাটার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি ব্যাংকের কাছে ৭ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে।

সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের দুই মাস ২১ দিনে (১ জুলাই থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) রিজার্ভ থেকে ২৮০ কোটি (২ দশমিক ৮০ বিলিয়ন) ডলারের মতো বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রির কারণেই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ার পরও রিজার্ভ কমছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭৬৭ কোটি (৭ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই রিজার্ভ থেকে এক অর্থবছরে এত ডলার বিক্রি করা হয়নি। অথচ তার আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় দর ধরে রাখতে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। -কালবেলা’

পরিচয়/টিএ

শেয়ার করুন