নিউইয়র্ক     বুধবার, ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ  | ১২ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ডায়াবেটিসে চোখের সমস্যা

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৩ | ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৩ | ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
ডায়াবেটিসে চোখের সমস্যা

ডায়াবেটিস থাকলে সময়মতো চোখের চিকিৎসা করাতে হবে। অবহেলা, অসচেতনতা ডায়াবেটিস রোগীর চোখের সমস্যাকে আরও জটিল করে এমন অবস্থায় নিয়ে যায়, যা আর চিকিৎসাযোগ্য থাকে না।

ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র ইনসুলিন হরমোনের অভাবজনিত একটি রোগ। এই রোগে দেহের যেসব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আক্রান্ত হয়, চোখ এর একটি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এপিডেমিওলজিক গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু ডায়াবেটিসের জন্য রেটিনা আক্রান্ত হওয়ার কারণে ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ রোগী দৃষ্টিস্বল্পতায় ভুগছে। এটা অবশ্য নির্ভর করে রোগী কত দিন ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, এর ওপর। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর সময় যত বেশি যাবে, চোখ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তত বাড়বে। চোখের গুরুত্বপূর্ণ অংশ রেটিনা। সংবেদনশীল এই পর্দা অক্ষিগোলকের ভেতরের দিকে থাকে। আমরা যা দেখি, এর ছবি প্রতিফলিত হয় এই পর্দার ওপর।

এরপর তা বিভিন্ন নিউরোকেমিক্যাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুহূর্তে মস্তিষ্কে পৌঁছে যায় এবং আমরা আমাদের চারপাশের ছবি দেখি। অনেকে ভাবেন, ছানি
অথবা অস্বচ্ছ লেন্সের জন্যই শুধু আমাদের দৃষ্টিশক্তি ব্যাহত হয়। এ ধারণা ঠিক নয়। স্বচ্ছ লেন্স আলোকে রেটিনার ওপর প্রতিফলিত করতে সাহায্য করে মাত্র। রেটিনা মূল সংবেদনশীল স্নায়ুপর্দা, যা প্রতিফলিত ছবিটিকে প্রক্রিয়াজাতের পর দৃশ্যমান করে। তাই কারও রেটিনা যখন আক্রান্ত হয়, তখন স্বচ্ছ লেন্স থাকার পরও অথবা অস্বচ্ছ লেন্স (ছানি) সরিয়ে স্বচ্ছ কৃত্রিম লেন্স (আইওএল) প্রতিস্থাপনের পরও ওই ব্যক্তি দেখতে পায় না।

রেটিনা যেভাবে আক্রান্ত হয় : ডায়াবেটিসে রেটিনায় সূক্ষ্ম রক্তনালিগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এতে একরকম রক্তশূন্যতা অথবা অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয়। ফলে কেন্দ্রীয় রেটিনায় পানি ও তেলজাতীয় পদার্থ জমে ফুলে যায় অথবা রেটিনায় অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ানোর জন্য রেটিনার বিভিন্ন জায়গায় নতুন রক্তনালির সৃষ্টি হয়। এসব রক্তনালি স্বাভাবিক রক্তনালির মতো পরিপক্ব হয় না। এই নতুন অপরিপক্ব রক্তনালি খুব সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এতে চোখের ভেতর রক্তক্ষরণ হয় এবং দৃষ্টিশক্তি একেবারেই চলে যায়।

ডায়াবেটিসজনিত অন্ধত্ব প্রতিরোধের উপায় : এসব সমস্যা প্রতিরোধ অথবা প্রতিকারের জন্য বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। গবেষণার ফলে কিছু কার্যকর চিকিৎসাপদ্ধতিরও উদ্ভব হয়েছে, যাতে কর্মক্ষম দৃষ্টিকে দীর্ঘদিন ধরে রাখা যায়, যদিও ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি একেবারে ভালো হয় না।

চিকিৎসা

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করা।
  • নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করা, যাতে প্রাথমিক অবস্থায় রোগ ধরা পড়ে এবং সহজে চিকিৎসা করা যায়।
  • বিভিন্ন ধরনের লেজার থেরাপি, যা আক্রমণের ধরন অনুযায়ী রেটিনায় প্রয়োগ করা হয়।
  • সম্প্রতি কিছু ইনজেকশন আবিষ্কৃত হয়েছে, যা চোখের ভেতর দিলে এসব সমস্যা সাময়িকভাবে প্রতিরোধ করা যায়।

চিকিৎসার ফলাফল

  • যেটুকু দৃষ্টি চলে গেছে, এর কিছুটা ফিরে আসতে পারে।
  • প্রতিনিয়ত রেটিনা আক্রান্ত হওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ অথবা ধীর হবে।
  • দৃষ্টি হারানোর গতি মন্থর হবে। এতে কর্মক্ষম দৃষ্টি অনেক দিন পর্যন্ত ধরে রাখা যায়।
  • পরবর্তী জটিলতা দেখা দেবে না।
  • স্থায়ী অন্ধত্ব প্রতিরোধ হবে।

    ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিকে বলা হয় চোখ অন্ধকারী রোগ বা ব্লাইন্ডিং ডিজিজ। সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ কর্মক্ষম দৃষ্টিকে অনেক দীর্ঘায়িত করতে পারে এবং পরবর্তী জটিলতা থেকে মুক্ত রাখতে পারে। অবহেলা, অসচেতনতা ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিকে আরও জটিল করে এমন অবস্থায় নিয়ে যায়, যা আর চিকিৎসাযোগ্য থাকে না। ফলে স্থায়ী অন্ধত্ব বরণ করতে হয়। তাই এ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীর সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।- মো. আরমান বিন আজিজ মজুমদার, চক্ষুরোগ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

এসএ/এমএএস/এমউএ/টিএ/পরিচয়

শেয়ার করুন