নিউইয়র্ক     রবিবার, ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পানামা খাল দখলের হুমকি

ট্রাম্প কী ‘আঞ্চলিক সম্প্রসারণ’ নীতির দিকে এগোচ্ছেন?

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০১:২০ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
ট্রাম্প কী ‘আঞ্চলিক সম্প্রসারণ’ নীতির দিকে এগোচ্ছেন?

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। রবিবার (২২ ডিসেম্বর) অ্যারিজোনার এক সমাবেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমন হুমকি দেন। তার এমন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো। এর আগে তিনি কানাডা ও ডেনমার্ক নিজেদের অধীনে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

সম্প্রতি ট্রাম্পের এসব বক্তব্য তার ‘আঞ্চলিক সম্প্রসারণ’ নীতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। কেননা নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প জোর দিয়েছিলেন তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির ওপর। তবে জয়ের পর তিনি একাধিকবার ‘আঞ্চলিক সম্প্রসারণের’ কথা বলেছেন। এক্ষেত্রে পানামা খালকে একটি সম্ভাবনা হিসেবে মনে করছেন তিনি। ট্রাম্প আসলে কী বলেছেন এবং কেন পানামা খাল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ— তা সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

কী বলেছেন ট্রাম্প?

রক্ষণশীল গ্রুপ টার্নিং পয়েন্ট আয়োজিত বার্ষিক অনুষ্ঠান ‘আমেরিকাফেস্ট’-এ পানামা খালের প্রসঙ্গ তোলেন ট্রাম্প। অ্যারিজোনার সেই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘পানামা খালে অতিরিক্ত অর্থ চার্জ করে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে, যেমন প্রতারণা আমাদের সঙ্গে অন্য সব জায়গায় করা হচ্ছে।’ তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র বোকামি করে পানামা খালের কর্তৃত্ব দিয়ে দিয়েছে।

অনুষ্ঠানের পরপরই সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকার একটা ছবিসহ মন্তব্য পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের খালে আপনাকে স্বাগত।ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের পর প্রতিবাদ জানান পানামার প্রেসিডেন্ট। নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘পানামা খাল এবং এর আশেপাশের প্রতিটি বর্গমিটার এলাকা পানামার অন্তর্ভুক্ত এবং (পানামার) অধীনে থাকবে।’

ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে মুলিনোর বিবৃতি সম্পর্কে একটি সংবাদের নিবন্ধ পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘আমরা এটি দেখব।’ শনিবার ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে ট্রাম্প পানামা খালের ওপর চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের দিকেও ইঙ্গিত দেন। তিনি লিখেছেন, ‘এটি পরিচালনার দায়িত্ব ছিল কেবল পানামার, চীন বা অন্য কারও নয়। আমরা কখনই এটিকে ভুল হাতে পড়তে দেব না!’

প্রসঙ্গত, চীন খালটি নিয়ন্ত্রণ করে না। তবে, হংকংভিত্তিক কর্পোরেশন সিকে হাচিসন হোল্ডিংস ১৯৯৭ সাল থেকে ক্যারিবিয়ান এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রবেশদ্বারে অবস্থিত খালের দুটি বন্দর পরিচালনা করেছে। এ বিষয়ে রবিবার এক বিবৃতিতে মুলিনো আরও বলেন, ‘পানামা খালের ওপর চীনের কোনো প্রভাব নেই।’

কী নিয়ে বিরোধ?

প্রশান্ত মহাসাগরকে আটলান্টিক মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত করতে মূলত এ খালটি কাটা হয়েছিল। বছরে প্রায় ১৪ হাজার জাহাজ এই খাল অতিক্রম করে। বিশ্বে সমুদ্রবাণিজ্যের ২.৫ শতাংশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ শতাংশই ওই পথে পরিবহন হয়। এশিয়া থেকে পণ্য আমদানির জন্য খালটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসসহ পণ্য রপ্তানির জন্যও যুক্তরাষ্ট্র এই নৌপথ ব্যবহার করে।

খালটি কারা নির্মাণ করেছে? মালিক কে?

খালটির মালিক পানামা সরকার। এটি ১৯০৪ থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল, যার বেশিরভাগ অংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করে। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি থিওডোর রুজভেল্ট নির্মাণের তদারকি করেছিলেন।

পানামা কবে মালিকানা লাভ করে?

১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের স্বাক্ষরিত এক চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র খালটির মালিকানা পানামার কাছে হস্তান্তর করে। ট্রাম্প বলেন, ‘যদি দানের এই মহৎ পদক্ষেপের নৈতিক ও আইনগত উভয় নীতি অনুসরণ করা না হয়, তবে আমরা পানামা খালটি সম্পূর্ণভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাব।’ তবে কীভাবে তা সম্ভব হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট।

খালটি কি শুকিয়ে যাচ্ছে?

২০২৩ সালের মধ্য আমেরিকার খরাবস্থা পানামা খালকেও প্রভাবিত করেছিল। খালটির জলকপাট খুলতে নিকটবর্তী কৃত্রিম গাতুন হ্রদের ওপর নির্ভর করতে। হ্রদে পানির স্তর কমে যাওয়ায় খাল কর্তৃপক্ষ নৌপথ ব্যবহারকারী জাহাজের সংখ্যা সীমিত করে এবং ব্যবহারের ফি বাড়িয়ে দেয়। অর্থবছরে পানামা খালে জাহাজ চলাচল কমেছে ২৯ শতাংশ। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ হাজার ৯৪৪টি খাল অতিক্রম করেছে, যা আগের বছর ছিল ১৪ হাজার ৮০টি। খালের উপর দিয়ে জাহাজ চলাচল এখন প্রাক-খরা স্তরে ফিরে এসেছে। তবে আগামী বছরের জন্য ফি আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

মুলিনো তার বিবৃতিতে বলেছেন, শুল্কহার খেয়ালখুশি মত ঠিক করা হয়নি। আরও জাহাজ চলাচলের লক্ষ্যে পানামা সরকার যে উন্নয়ন কাজ করছে, তাতে কাজে দেবে বাড়তি শুল্ক থেকে পাওয়া অর্থ।

ট্রাম্প কী বলেন?

নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প জোর দিয়েছিল ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির ওপর। তবে জয়ের পর তিনি একাধিকবার ‘আঞ্চলিক সম্প্রসারণের’ কথা বলেছেন। এক্ষেত্রে পানামা খালকে একটি সম্ভাবনা হিসেবে মনে করছেন তিনি। কানাডার দিকেও ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। ১৮ ডিসেম্বর তিনি ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘অনেক কানাডীয় চায় কানাডা ৫১তম অঙ্গরাজ্য হোক। তাদের কর ও সামরিক সুরক্ষার খরচ ব্যাপকভাবে সাশ্রয় করবে। আমি মনে করি এটি একটি দুর্দান্ত ধারণা। ৫১তম রাষ্ট্র!! নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট সত্যিই এমনটি চান কিনা তা স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন। ট্রাম্প সম্প্রতি তার উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিবেশী দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়ার পর কানাডার অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড পদত্যাগ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ওপর পদত্যাগের জন্য চাপ জোরদার হয়।

ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ড নিয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। সোমবার ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প জানান, কেন ডেনমার্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে কেন হাওয়ারিকে বেছে নিয়েছেন তিনি। পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে— গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ নিঃসন্দেহে প্রয়োজন।’ ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদেও এ কথা বলেছিলেন, কিন্তু ডেনিশ কর্তৃপক্ষ তার এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিল। ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী তখন বলেছিলেন, ‘গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়।’

শেয়ার করুন