ঢাকা : বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এবং ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে ‘গুজবে’ কান না দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ বিজয় দিবসের আগে ১৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তিনি বলেন, “ব্যাংকে টাকা নেই বলে গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ অযথা গুজবে কান দিবেন না৷ ব্যাংকে টাকার কোনো ঘাটতি নেই৷ উপার্জিত টাকা ঘরে রেখে বিপদ ডেকে আনবেন না৷ আমাদের বিনিয়োগ, রেমিটেন্স প্রবাহ এবং আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে৷
দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য বিশ্ব পরিস্থিতিকে দায়ী করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, সরকারের ‘সময়োচিত’ পদক্ষেপে করোনা মহামারীর ধাক্কা সামাল দেওয়া সম্ভব হলেও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক অবরোধ, পাল্টা অবরোধের কারণে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল ও আমদানি-নির্ভর দেশগুলো সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে৷ শেখ হাসিনা বলেন ‘‘নিজস্ব চাহিদা মেটানোর জন্য কোনো কোনো দেশ বিনা নোটিশে পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছে৷ সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে আমরা পৃথিবীর যেখানেই আমাদের চাহিদার পণ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেখান থেকেই তা সংগ্রহ করছি এবং যোগান দিচ্ছি৷”
আমদানির চাপে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে৷ এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে অনেকেই নানা মনগড়া মন্তব্য করছেন৷ তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকলেই চলে৷ বর্তমানে আমাদের পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মত বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ আছে৷”
রিজার্ভ কমার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “করোনা ভাইরাসের মহামারির সময় সব ধরনের ভারী যন্ত্রপাতি আমদানি, বিদেশ ভ্রমণ এবং অন্যান্য পণ্য আমদানি অনেকটা বন্ধ ছিল৷ সে সময় আমাদের রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়৷ …এই বিপুল পরিমাণ অর্থ অলস অবস্থায় না রেখে সেখান থেকে কিছু পরিমাণ অর্থ দিয়ে আমরা একটা বিশেষ তহবিল গঠন করেছি৷ সেই তহবিলের অর্থ দ্বারা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।”
সোনালি ব্যাংকের মাধ্যমে দুই শতাংশ হার সুদে এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ঘরের টাকা সুদসহ ঘরেই ফেরত আসছে৷ এ অর্থ যদি বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া হতো, তাহলে চার-পাঁচ শতাংশ হারে সুদসহ ফেরত দিতে হতো৷ আর তা পরিশোধ করতে হত রিজার্ভ থেকেই৷” ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব৷”
সংকট উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সংকট আসবে৷ সংকটে ভয় পেলে চলবে না। জনগণের সহায়তায় আমরা করোনাভাইরাস মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করেছি৷ বর্তমান বৈশ্বিক মন্দাও আমরা মোকাবিলা করব, ইনশাআল্লাহ। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই৷” – বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম