দুই টুকরো হয়ে মহাসাগরের ৪ হাজার মিটার নিচে ডুবে আছে টাইটানিক। ১৯৯৬ সালে যখন এই জায়ান্ট শিপে ডুবুরি পাঠানো হয় তারা শুনতে পান অদ্ভুত প্রতিধ্বনি। তা নিয়ে জমাট বাঁধে রহস্য। ওই দফায় সেই প্রতিধ্বনির কোন রকম সুরাহা না করেই ফিরে আসে ডুবুরিরা। সম্প্রতি বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে। এর পেছনে রয়েছে জলজগত নিয়ে নতুন আবিষ্কার।
সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানায়, চারজন গবেষককে সঙ্গে নিয়ে এ বছর টাইটানিকে আরেক দফা অভিযান চালান বিখ্যাত ডুবুরি পিএইচ নারজিওলেট। তাদের উদ্দেশ্য সেই অমীমাংসিত রহস্যের উৎস সন্ধান। নারজিওলেটের বিশ্বাস ছিল নতুন কোন জাহাজের সন্ধান মিলতে পারে। আদতে কোন জাহাজ মিলেনি। পাওয়া গিয়েছে, হাজার বছরের পুরোনো প্রবাল, অতল সাগরের মাছ এবং শামুকসহ সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জগত। বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে এই অঞ্চল ও সামুদ্রিক প্রজাতি বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করেছে।
১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল রাতে আটলান্টিক মহাসাগরে প্রথম অভিযাত্রায় সলিল সমাধি হয় টাইটানিকের। মৃত্যুবরণ করে ১৪৯১ থেকে ১৫১৩ জন যাত্রী ও কর্মী। গবেষকরা এর আগে নানাভাবে উত্তর আটলান্টিকের তলদেশে শুয়ে থাকা টাইটানিক নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করলেও বলা হচ্ছে, নারজিওলেটের এই আবিষ্কার সমুদ্রবিজ্ঞানের জগতে নতুন দুয়ার উন্মোচন করবে।

ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের অ্যাপ্লায়েড মেরিন বায়োলজি অ্যান্ড ইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মুরে রবার্টস দাবি করেন, ওইখানে পাওয়া প্রাণীরা বিশাল সমুদ্রের অন্য যে কোনো স্থানের প্রাণীর চেয়ে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। ফলে নারজিওলেটের কাজটি বৈজ্ঞানিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। হয়তো তিনি বিধ্বস্ত কোন জাহাজ খুঁজতে গিয়েছেন। কিন্তু এই আবিষ্কার তার চেয়ে বেশি কিছু। এটি সমুদ্রের তলদেশে প্রাণের প্রবাহ ও জীববৈচিত্র্য বুঝতে সাহায্য করবে।
নারজিওলেটের অভিযানে প্রাপ্ত ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণে ব্যস্ত গবেষকরা। তারা সমুদ্র সম্পর্কিত এ যাবতকালের জ্ঞানকে সামগ্রিকভাবে ব্যবহার করতে ইচ্ছুক। আটলান্টিক মহাসাগরের বাস্তুতন্ত্র নিয়ে গবেষণার জন্য রবার্ট এর মধ্যে ‘আইআটলান্টিক’ নামে একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এ দিকে নারজিওলেটের আবিষ্কৃত প্রবাল অঞ্চলের ঠিক অদূরেই নতুন একটা স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। গবেষকদের ধারণা, বর্তমানে আবিষ্কৃত স্থানের চেয়ে এটি পরিসরে অনেক বড়।
নারজিওলেটের অভিযানে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে ‘ওশেনগেট এক্সপেডিশান্স’। টাইটানিক ও তার আশেপাশের অঞ্চলে আগামী বছর পর্যন্ত চলতে থাকবে এই অনুসন্ধান। নারজিওলেটের ভাষায়, সামুদ্রিক জীবন সুন্দর। সত্যিই অবিশ্বাস্য। আমি জীবনে ওসব দেখবো বলে কল্পনাও করিনি।