বাঙালি রান্নায় একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় উপাদান হলুদ। প্রাচীনকাল থেকে হলুদ কেবল রান্নায় নয়, বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হতো। এবার হলুদের আরও একটি গুণ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, গ্যাস্ট্রিক ও বদহজমের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে হলুদ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞান সাময়িকী বিএমজে এভিডেন্স-বেজড মেডিসিনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, হলুদ গ্যাস্ট্রিক ও বদহজমের চিকিৎসায় ওমিপ্রাজল হিসেবে কাজ করতে পারে। এই উপাদানটি পাকস্থলীর অতিরিক্ত অ্যাসিড কমিয়ে বদহজম উপশম করতে পারে।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিকভাবেই হলুদে কার্কিউমিন নামে একটি উপাদান থাকে। যা সাধারণত বিভিন্ন স্থানে প্রদাহ বা জ্বলন এবং জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, এই ওষুধটিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বদহজমের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে এত দিন পর্যন্ত বিষয়টি নিশ্চিত ছিল না যে, হলুদ কীভাবে বদহজম উপশমকারক হিসেবে কাজ করে।
কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চালানো গবেষণার মাধ্যমে হলুদ কীভাবে কাজ করে সে রহস্যের সমাধান হয়েছে। এই গবেষণায় ১৮ থেকে ৭০ বছর বয়সী ২০৬ জন ব্যক্তিকে নেওয়া হয় যাদের সবাই বিভিন্ন পেটের পীড়ায় ভুগছিলেন। তাদের তিনটি দলে ভাগ করে ২৮ দিন পর্যন্ত তিনটি পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সেগুলো হলো—সরাসরি হলুদের ব্যবহার (প্রতিদিন ৪ বেলা দুটি করে ২৫০ মিলিগ্রাম কার্কিউমিন ক্যাপসুল) এবং সঙ্গে একটি ডামি ক্যাপসুল, অন্য পদ্ধতিতে একটি ২০ মিলিগ্রাম ওমিপ্রাজল ক্যাপসুলের সঙ্গে দুটি ডামি ক্যাপসুল দিনে চার বেলা এবং সরাসরি হলুদের সঙ্গে একটি ওমিপ্রাজল। ওমিপ্রাজল হলো একটি প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর। এটি সাধারণত ডিসপেপসিয়া বা বদহজম সারাতে ব্যবহার করা হয়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে অতিমাত্রায় প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর ব্যবহার পাকস্থলীর ক্যালসিয়াম শোষণক্ষমতা কমিয়ে দেয় ফলে মানুষের অস্থি ভাঙার ঝুঁকি বাড়ে। একই সঙ্গে বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে।
যা হোক গবেষণার নমুনা হিসেবে নেওয়া ব্যক্তিদের প্রায় একই রকমের অসুস্থতা ছিল। তাদের ওপর প্রথম দফা মূল্যায়ন চালানো হয় ২৮ দিন পর এবং পরে আবার ৫৬ দিন পরে। পরে গবেষকেরা দেখতে পান, কার্কিউমিন গ্রহণ করা ওমিপ্রাজল ব্যবহারের চেয়ে অনেক নিরাপদ। এবং ওমিপ্রাজল ব্যবহারকারী রোগীদের মতোই সুস্থতা লাভ করেছিলেন কার্কিউমিন বা হলুদ গ্রহণকারী ব্যক্তিরা।
গবেষকেরা গবেষণার নানা সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখে বলছেন, এই নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় হলুদের ব্যবহারে ইতিবাচক ফলাফল মিলেছে। তাঁরা আরও বলেছেন, আমাদের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য হয়তো গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় কার্কিউমিনের ক্লিনিক্যাল ব্যবহারের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করা হবে।