নিউইয়র্ক     শনিবার, ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোন পথে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০৫ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
কোন পথে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ?

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ১০ মাস হতে যাচ্ছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সমাপ্তি কখন ঘটবে এবং কীভাবে ঘটবে, তা কেউ বলতে পারে না। তবে কয়েক মাসের লড়াইয়ে ইউক্রেন যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। একদিন নিশ্চয়ই শান্তি ফিরে আসবে দেশটিতে। দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে ইউক্রেন যুদ্ধের পাঁচটি ট্র্যাক তুলে ধরা হয়েছে।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রথম ট্র্যাক হলো যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের টেকসই সুবিধা। রাশিয়ায় প্রতিবেশী দেশটির চেয়ে জনসংখ্যা তিনগুণেরও বেশি। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনের অবকাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস করার চেষ্টা করবে পুতিন সরকার, এমন আভাস মিলছে। এরইমধ্যে ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার চারটি ইউক্রেনীয় প্রদেশ দখলে নিয়েছে। প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী ও রসদ সরবরাহ করে লড়াই চালিয়ে যাবে মস্কো। তবে পুতিন অনিচ্ছুক রাশিয়ার নাগরিকদের যুদ্ধে যেতে যত বেশি চাপ দেবেন, তত বেশি মৃতদেহের জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে এবং তাকে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।

আরোও পড়ুন।‘নতুন নিষেধাজ্ঞা ইইউ’র অভ্যন্তরীণ সমস্যাকেই বাড়িয়ে তুলবে’

বিপরীতে, ইউক্রেন ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সেনা ও বুদ্ধিমান কর্মকর্তাদের একত্রিত করছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চল ও ডনবাস অঞ্চলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে। ইউক্রেনীয় বাহিনী পূর্ব ও দক্ষিণে অধিকৃত অঞ্চলের বিদ্যুৎসংযোগ পুনরায় চালু করবে যা তারা সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরেও পরিচালনা করেছে। কিন্তু তারা এটি করতে না পারলেও তাদের ধীরগতির অগ্রযাত্রা চালিয়ে যেতে হবে।

ইউক্রেনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি তাদের করা অত্যাবশ্যক কাজ। ইউক্রেন নিজের গতিবিধি থেকে যুদ্ধে জয়ী হবে না, তবে অন্য সবকিছুর এটি ভিত্তি বলা চলে। ইউক্রেনের প্রচেষ্টাকে বেগবান করতে পশ্চিমা সমর্থন অবিচল। পুতিন হিসেব কষেছিলেন, পশ্চিমারা ইউক্রেনকে পরিত্যাগ করবে বা অন্ততপক্ষে দেশটিকে অসম শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাধ্য করবে। তাই তিনি ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া এবং পারমাণবিক যুদ্ধের সতর্কবার্তা দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রের লড়াইয়ের চেয়ে বিকল্প পথে মোকাবিলার করার চেষ্টা করেন।

পশ্চিমা সরকারগুলোকে বোঝানোর মাধ্যম হলেও এই হুমকির পাল্টা জবাব ছিল পুতিনকে হাস্যরস ভাবা বিপজ্জনক হবে। ২০১৪ সালে যখন রাশিয়া প্রথম ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল সেই ক্রেমলিনের কাছে ইউক্রেনের ভূমি হস্তান্তর করা শুধু পরবর্তী সংঘাতের জন্য মঞ্চ তৈরি করবে। তাই পশ্চিমা অস্ত্র পূর্বদিকে প্রবাহিত হতে থাকবে এবং রাশিয়ার গ্যাস আর কখনই পশ্চিমে যাবে না। এই শীতকাল তাদের জন্য কঠিন হবে এবং পরবর্তীতে আরও খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে। বিশেষ করে যদি জ্বালানির জন্য চীনের চাহিদা বেড়ে যায় কিংবা তেল ও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দেয়। তবুও, যতদিন ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রসর হচ্ছে, ইউরোপীয় সংকল্পও স্থায়ী হবে।

ইউক্রেন যুদ্ধের তৃতীয় ট্র্যাকটি বিশ্বের বাকি অংশের সঙ্গেও জড়িত। সরাসরি না হলেও রাশিয়াকে মৌন সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে চীন। ভারতসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশও কিছুটা পিছুটান নিয়েছে। তারা পশ্চিমের এজেন্ডায় সায় দিতে নারাজ। তবে এখানেও পুতিন সমর্থন হারাচ্ছেন ধীরে ধীরে। সেপ্টেম্বরে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ সম্মেলনে তিনি তার সমপর্যায়ের নেতাদের কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন। তবে গত অক্টোবরে, রাশিয়ার ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলের সংযুক্তি নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভোটে, পুতিন সবচেয়ে বড় পরাজয়ের সম্মুখীন হন।

প্রথম তিনটি ট্র্যাক চতুর্থ ট্র্যাকে একত্রিত হচ্ছে। আর এই চতুর্থ ট্র্যাকটি হলো ইউক্রেন-রাশিয়ার লড়াই শেষ করার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। এই কঠিন সময়ে, যুদ্ধ অব্যাহত রাখা আরও কঠিন। দ্য ওইসিডি নামে ধনী দেশগুলোর একটি ক্লাব, ধারণা দেয় ২০২৩ সালে যুদ্ধের জন্য ২ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হবে। পশ্চিমে অস্ত্রের ঘাটতি আরও উদ্বেগ বাড়াবে।

ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ২০২৩ সালে ব্যাপক আলোচনা জরুরি। তবে সমস্যা হলো রাশিয়ান বা ইউক্রেনীয়রা এখনও তাদের অস্ত্র নামাতে প্রস্তুত নয়। পুতিন হয় যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে চাইবেন কিংবা বাজি ধরেছেন তিনি আক্রমণাত্মক ও যুদ্ধের গতি পুনরুদ্ধার করবেন, বা সংঘাত স্থগিত করতে পারেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, ২০১৪ সাল থেকে তার দেশের হারিয়ে যাওয়া সব ভূখণ্ড ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পশ্চিমা দেশগুলো জোর দিচ্ছে কখন আলোচনা করতে হবে এবং ইউক্রেনকে একাই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাস্তবে, যদিও, তারাই যুদ্ধের জন্য অর্থ প্রদান করছে। এক পর্যায়ে তারা চাপও প্রয়োগ করবে।

যুদ্ধ শেষ হবে মস্কোতে, এমনটাও ভাবা হচ্ছে। যদিও সেই মুহূর্ত সম্ভবত পঞ্চম ও সবচেয়ে অনিশ্চিত ট্র্যাক দ্বারা নির্ধারিত। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মস্কোতে কিছু পরিবর্তন আসতে হবে। অস্ত্রের জোরে ক্রেমলিনের ওপর আত্মসমর্পণ চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। এর পরিবর্তে রাশিয়ানদের সত্য ও বাস্তবতা উপলব্ধি করতে হবে। আর সেই সত্য হচ্ছে, পুতিন একটি নিরর্থক, অজেয় যুদ্ধে তাদের জীবন নষ্ট করছেন।

পুতিন রাসায়নিক বা পারমাণবিক অস্ত্র অবলম্বন করতে পারেন যদিও এটি রাশিয়ার বিজয়ের পথ পরিষ্কার করবে না। সম্ভবত তিনি ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার জন্য তার লোকসান কমিয়ে দেবেন, অথবা অভিজাতদের মাধ্যমে পরিত্যক্ত হবেন। ২০২৩ সাল বা এই বছরটি শুরু হবে পুতিন কিছু একটা উত্থানের আশায় যুদ্ধক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে পারেন। এ ছাড়া চীনা সামরিক সহায়তা, ইউরোপীয় ঐক্যের বিভাজন বা যুক্তরাষ্ট্রে পুনরায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফিরে আসার সম্ভাবনাও যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন জানেন যুদ্ধে সবকিছুই সম্ভব। তবে তাকে এটাও জানতে হবে জোয়ার এখন তার প্রতিকূলে। সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

শেয়ার করুন