বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কে স্যাংশন দিলো, কাকে দিলো তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। নির্বাচনে জনগণ যাকে ভোট দিবে সেই বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এখন ভোটের অধিকার সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, বহু নেতাকর্মীর রক্তের বিনিময়ে নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ে এসেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের ভোটেই আমরা নির্বাচিত, কেউ ক্ষমতা হাতে তুলে দেয়নি। গত ২২শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ মিশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, বাংলাদেশে এখন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের কোনো সুযোগ নেই এবং লঙ্ঘনকারীদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও সংবিধান লঙ্ঘন করে কেউ যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। এটি ভুলে গেলে চলবে না।’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া অন্য কেউ বিকল্প উপায়ে ক্ষমতায় আসতে চাইলে তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। এটা মাথায় রাখতে হবে। তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।শুরুটা কারা করলো, সেটা আগে দেখতে হবে। দেখে পরে স্যাংশন দেবে। আর যদি আওয়ামী লীগকে টার্গেট করে থাকে তাহলে আমার কিছু বলার নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন বাইরের দেশ থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হলে বাংলাদেশের জনগণও তাদের স্যাংশন দেবে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি প্রয়োগে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হোক সেটাই চায় আওয়ামী লীগ। জনগণের শক্তিতেই বিশ্বাস করি আমরা।
দেশে ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ স্লোগানটি চালু করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর দল এটি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। জনগণ এখন তাঁদের ভোটাধিকার নিয়ে যথেষ্ট সচেতন। তাঁর সরকারের নির্বাচনী সংস্কারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন ব্যালট বাক্স স্বচ্ছ। ফলে জাল ভোট দিয়ে বাক্স পূরণের কোনো সুযোগ নেই। ছবিসহ ভোটারের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এগুলো (নির্বাচনী ব্যবস্থা) সংস্কার করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনসংক্রান্ত আইনটি আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ করেনি। আমরা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করেছি। আমরা নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ আর্থিক স্বাধীনতা দিয়েছি।’ যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা এটা বলছে, তাদের দেশের নির্বাচন নিয়েও তো সমস্যা আছে। আমরা তো দেখতে পাচ্ছি, তারা তাদের বিরোধী দলের সঙ্গে কী করছে। আমরা তো তাও করিনি।
২০১৩ সালে অগ্নিসন্ত্রাস এবং ২০১৮ সালে বিএনপির নমিনেশন বাণিজ্য আর শত শত ভোট কেন্দ্রে হামলা দেখেছে জনগণ। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী বিএনপির ভোটারবিহীন নির্বাচনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের মানুষ সেই নির্বাচন মানেনি তাই অল্প দিনেই খালেদা জিয়ার সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়। দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কিছু ক্ষমতা থাকায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামী হওয়ার পরও খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকতে দিচ্ছেন এবং চিকিৎসাও চলছে বলে মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গঠনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাস্তব রূপ দিতে মানুষের কল্যাণে অন্তর্ভূক্তিমূলক ও আধুনিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক বিনিয়োগ করেছি। তার দেখানো পথে বাস্তবমুখী নীতি গ্রহণ, সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হতে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ সময় সরকারে থেকে শত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখেছি বলেই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। তিনি জানান, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, পরিবহন খরচ বেড়েছে, পণ্যমূল্য বেড়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সারা বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির ধাক্কা কিছু হলেও লাগবে বাংলাদেশে । তারপরও দেশের মানুষ শান্তিতে আছে ।
রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ নিতে তিনি বিশ্বের মোড়লদের প্রতি আহ্বান জানান। ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় এবং সুন্দর কথা হয়েছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান। প্রবাসীদের পাঠানোর রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। ভোটের সময় দেশে গিয়ে ভোট দিতে তিনি প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান। সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনসহ জাতিসংঘ মিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।