নিউইয়র্ক     শুক্রবার, ১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৯শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবার রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৩:৫৭ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৩:৫৭ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
এবার রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা

ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রাশিয়ার কার্স্ক অঞ্চলের একটি বিমানঘাঁটিতে ড্রোন হামলা হয়েছে। মস্কোর অভিযোগ, ইউক্রেনীয় বাহিনী এ হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে কিয়েভের অভিযোগ, রুশ বাহিনী ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা অব্যাহত রেখেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, সোমবারের রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইউক্রেন বিদ্যুৎ গ্রিড স্থিতিশীল করতে জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে।

কিয়েভের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলেছে, এ অঞ্চলের প্রায় অর্ধেক আগামী দিনে বিদ্যুৎবিহীন থাকবে। রুশ বাহিনীর সোমবারের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এদিকে গতকাল মঙ্গলবারের কার্স্কে ড্রোন হামলার পর তেল সংরক্ষণাগারে আগুন লেগে যায়। স্থানীয় গভর্নর রোমান স্তারোভায়ত গতকাল মঙ্গলবার এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় কোনো হতাহত হয়নি। তবে দ্রুত সন্ত্রাসবিরোধী কমিশন বৈঠক করছে। কার্স্ক শহরটি ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে।

দ্য গার্ডিয়ান–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রুশ ভূখণ্ডের গভীরে দুটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেন দুঃসাহসী ড্রোন চালানোর পর মঙ্গলবার কার্স্ক অঞ্চলের বিমানঘাঁটিতে ওই হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে স্তারোভায়ত বলেন, ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা স্থানীয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে বিশাল বিস্ফোরণের পর রাতের আকাশে আগুনের শিখা দেখা যায়। পরে ওই এলাকা থেকে কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনা নিয়ে কিয়েভ বা মস্কোর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। গত সোমবারের হামলার জন্য রুশ কর্তৃপক্ষ সোভিয়েত যুগের তৈরি বিশেষায়িত ড্রোন ব্যবহারের অভিযোগ করে। সম্প্রতি ইউক্রেনের পক্ষ থেকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা বেড়েছে। কিয়েভ কর্তৃপক্ষ রাশিয়ার অভ্যন্তরেও যুদ্ধ ছড়িয়ে দিতে চাইছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু বলেন, ইউক্রেন জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইচ্ছাকৃতভাবে গোলাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে সম্ভাব্য পারমাণবিক বিপর্যয়ের হুমকি তৈরি হয়েছে।

সোমবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ইউক্রেনের ড্রোন রায়াজান ও সারাতোভ এলাকায় আঘাত হানায় তিনজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। এতে দুটি উড়োজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে কোনো আক্রমণের দায় স্বীকার করা হয়নি। তবে ইউক্রেনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, রাশিয়ার আঘাত হানা ড্রোনগুলো ইউক্রেন থেকে পাঠানো। ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠান ইমেজস্যাটের ছবিতে ড্রোন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বিমানঘাঁটির ছবি প্রকাশ করেছে।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, সোমবারের ওই আক্রমণ সন্ত্রাসী কার্যক্রম। এ হামলায় দূরপাল্লার জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্য ছিল। নিচু দিয়ে উড়তে সক্ষম এমন ড্রোন গুলি করে নামানো হয়েছে। ইউক্রেনের সামরিক বিশ্লেষক সেরহি জুরেটস বলেন, রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনের হামলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্থ বহন করে।

ইউক্রেনের বিদ্যুৎ সঞ্চালনব্যবস্থায় গত ১০ অক্টোবর ব্যাপকভাবে সমন্বিত হামলা শুরু করে রাশিয়া। এরপর দেশটির প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে লাখ লাখ ইউক্রেনীয় বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। দেশটিতে শীতকালে তাপমাত্রাও শূন্যতে গিয়ে ঠেকেছে।

ক্রিমিয়া সেতু পরিদর্শনে পুতিন

মার্সিডিজ চালিয়ে সোমবার ক্রিমিয়া সেতু ঘুরে গেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই সেতু রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সংযোগ স্থাপন করেছে। দুই মাসেরও কম সময় আগে বিস্ফোরণে সেতুটির একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সাগরের ওপর ১৯ কিলোমিটারের সড়ক ও রেল সেতুটিকে রাশিয়ার অবকাঠামো শক্তিমত্তার প্রদর্শনী হিসেবে দেখা হয়। ২০১৮ সালে পুতিন নিজে সেতুটির উদ্বোধন করেছিলেন।

গত ৮ অক্টোবর ক্রিমিয়া সেতুর ওপর বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। ইউক্রেন ওই হামলা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ করে আসছে রাশিয়া। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা যায়, পুতিন গাড়ির চালকের আসনে বসে সঙ্গে থাকা উপপ্রধানমন্ত্রী মারাত খুসনুল্লিনের কাছে জানতে চাইছেন, কোথায় হামলাটি চালানো হয়েছিল।

সেতু অতিক্রম করার সময় পুতিন বলেন, ‘আমরা সেতুর ডান পাশের অংশে গাড়ি চালাচ্ছি। যেমনটা আমি বুঝেছি, সেতুর বাঁ পাশ চলাচল করার মতো অবস্থায় আছে। কিন্তু তবুও কাজটি পুরোপুরি শেষ হওয়া দরকার। এই পাশে এখনো সামান্য সমস্যা আছে, আমাদের সেটাকে উপযুক্ত অবস্থায় নিয়ে আসা প্রয়োজন।’

ক্রিমিয়া সেতু ইউরোপের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু। পুতিনকে সেতুর কিছু অংশে হাঁটতেও দেখা যায়। বিস্ফোরণে সেতুর পুড়ে যাওয়া অংশটি ভালো করে দেখতে গাড়ি থেকে নামেন তিনি।

পুতিনের ৭০তম জন্মদিনের পরদিন ৮ অক্টোবর সকালে ক্রিমিয়া সেতুতে বোমা হামলা চালানো হয়। ইউক্রেন কখনো এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা বলেছে, ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী এই হামলা চালানো হয়।

বিস্ফোরণে সড়ক সেতুর একটি অংশ ধসে যায়। এতে কার্চ প্রণালির ওপর এই সেতু দিয়ে যান চলাচল সাময়িক ব্যাহত হয়। বিস্ফোরণে একটি ট্রেনে থাকা কয়েকটি জ্বালানি ট্যাংকারেও আগুন ধরে যায়। ট্রেনটি পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ রাশিয়া থেকে ক্রিমিয়া যাচ্ছিল। রাশিয়া ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল করে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে নেয়। ইউক্রেন উপদ্বীপটি ফিরিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।

শেয়ার করুন