নিউইয়র্ক     রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এন্টিকরাপশন চ্যাম্পিয়ন রোজিনা ইসলাম-কে সংবর্ধিত করেছে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাব

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৪:১৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১২:১৪ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
এন্টিকরাপশন চ্যাম্পিয়ন রোজিনা ইসলাম-কে সংবর্ধিত করেছে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাব

নিউইয়র্ক : যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সম্মানজনক ‘এন্টিকরাপশন চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়া বাংলাদেশের সাহসী সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম-কে সংবর্ধিত করেছে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাব। সম্প্রতি তিনি এই অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে এখনো রোজিনার মতো সাংবাদিকরা আছে বলেই সরকারী দূর্নীতির বিরুদ্ধে রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে। সরকারী বিজ্ঞাপন না পেয়েও কোন কোন মিডিয়া পাঠক প্রিয়তার জোরে দায়িত্বপালন করে চলেছে। সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম সাহসিকতার সাথে তার পেশাগত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশ, দেশের সাংবাদিক ও প্রবাসী বাংলাদেশী সাংবাদিকদের মুখ উজ্জল করেছেন। তেমনী তার এই স্বীকৃতি সাহসী সাংবাদিকতায় অন্য সাংবাদিকদের উৎসাহিত করবে।

সংবর্ধনার জবাবে রোজিনা ইসলাম তাঁর প্রতি সমর্থন ও ভালোবাসা জানানোর জন্য সাংবাদিকসহ প্রবাসী জনসমাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমি আমার দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই কাজ করি এবং সততার সাথে আজীবন পেশাগত দায়িত্ব চালিয়ে যাবো। যুক্তরাষ্ট্রের ‘এন্টিকরাপশন চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড’ আমার দায়িত্ব আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিøঙ্কেন ৯ ডিসেম্বর শুক্রবার রোজিনা ইসলামসহ বিভিন্ন দেশের ৮ জন ব্যক্তিকে ২০২২ সালের ‘এন্টিকরাপশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেন।

সিটির জ্যাকসন হাইটস্থ বাংলাদেশ প্লাজা মিলনায়তনে গত ১৯ ডিসেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় উল্লেখিত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রেসক্লাবের সভাপতিত্ব এবং সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টিভি’র সিইও করেন আবু তাহের সভায় সভাপতিত্ব করেন। ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে রোজিনা ইসলাম-কে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক আজকাল-এর প্রধান সম্পাদক মনজুর আহমেদ, বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট হাসান ফেরদৌস, সাপ্তাহিক দেশবাংলা সম্পাদক ডা. সরোয়ারুল হাসান, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, আজকাল সম্পাদক জাকারিয়া মাসুদ জিকু, নিউইয়র্ক-এর প্রথম আলো’র সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ, টিবিএন ২৪ এর সাংবাদিক সুলতানা রহমান, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট রানু ফেরদৌস, লেখক রহমান মাহবুব প্রমুখ।

মনজুর আহমদ বলেন, সাংবাদিকতা সবসময়-ই সাহসী কাজ। কাজের মধ্যেই তো পরে দূর্নীতির বিরুদ্ধে লেখা। আগে সাহসী সাংবাদিক বলতে কিছু শুনিনি। আজকের দিনের প্রেক্ষাপটেই সাহসী সাংবাদিক হতে হয়, বলতে হয়।

হাসান ফেরদৌস বলেন, সাংবাদিকদের মূল ও প্রথম দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে সত্য তুলে ধরা, ক্ষমতাশীল মানুষদেরকে সত্য কথা জানানো। আর ক্ষমতাশীলরা সত্য কথা পছন্দ করে না। তারা নিজেদেরকে ‘ভালো’ বলা পছন্দ করে।

ডা. চৌধুরী সারোয়ারুল হাসান বলেন, দেশের ন্যায় প্রবাসেও অনিয়ম-অনৈতিকতা চলছে। এসবের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সোচ্চার হওয়া দরকার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সোসাটির নির্বাচনে ভোটার বানানোও এক ধরনের অপরাধ, অন্যায়।

ডা. ওয়াজেদ এ খান বলেন, সৎ আর সাহসী সাংবাদিকতা সহজ নয়। এমন সাংবাদিকদের ঝুঁকি নিয়েই দায়িত্ব পালন করতে হয়। ‘ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারী’ নামক একটি রির্পোটের কারনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সন-কে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়। সত্য বলা আর অধিকার প্রতিষ্ঠার মূল্যায়ন এখনো আছে বলেই রোজিনা ইসলামের মতো সাংবদিকরা ‘এন্টিকরাপশন চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড’ পায়। তাঁর এই প্রাপ্তি বাংলাদেশে সাহসী সাংবাদিকতার পথকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে।

জাকারিয়া মাসুদ বলেন, রোজিনা ইসলাম আরো বড় বড় রিপোর্ট করে আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবেন-এটাই আমার বিশ্বাস।

ইব্রাহীম চৌধুরী তার বক্তব্যে রোজিনা ইসলামকে সাহসী সাংবাদিকতার নিবেদিত কর্মী হিসেবে উল্লেখ করে বলেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সম্মানজনক অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার জন্য তাঁকে অভিনন্দিত। রোজিনা বাংলাদেশের সাংবাদিকদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তাঁর এ কাজ সাংবাদিকদের জন্য প্রেরণা হয়ে কাজ করবে।

সুলতানা রহমান বলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম আমার অনেক পুরনো বন্ধু। আমারা এক সাথেই একই কাগজেও কাজ করেছি। তাঁর অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তিতে আমরা সবাই খুশি। পেশাগত বাঁধা রোজিনাকে আরো বেগমান করে তুলে, বাঁধা ভাঙার আনন্দ রোজিনার প্রধান শক্তি।

রোজিনা ইসলাম বলেন, আমার মামলাটি ছিলো ‘রাষ্ট্র বনাম রোজিনা ইসলাম’। এমন একটি মামলা থেকে ফিরে এসে কাজটি চালিয়ে যাওয়া কঠিন কাজ হলেও আজকের অ্যাওয়ার্ড আমাকে আমার দায়িত্বপালনে অনপ্রেরণা যুগাবে। তিনি বলেন, আমি আজীবন সাংবাদিকতা করে যাবো, কোন বাঁধাই আমাকে আটকাতে পারবে না। তার বিপদের সময় দেশ ও প্রবাসের সাংবাদিকরা পাশে দাঁড়িয়ে তাকে যে সাহস যুগিয়েছেন এজন্য তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে আবু তাহের সাহসী সাংবাদিকতায় অ্যাওয়ার্ড প্রদান করায় ইউএস ষ্টেট ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে স্বাগত জানান এবং সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এমন আওয়ার্ড সকল সাহসী সাংবাদিকদের অনুপ্রাণিত করবে।

সবশেষে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে রোজিনা ইসলামের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয়।

সিনিয়র সাংবাদিক হাসান মাহমুদ, শাহেদ আলম, টাইম টিভির অন্যতম পরিচালক সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাব-এর যুগ্ম সম্পাদক মমিন মজুমদার, কোষাধ্যক্ষ রশীদ আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম সোলায়মান, নিউইয়র্ক বাংলা সম্পাদক আফরোজা ইসলাম, লেখক শেলী জামান খান, রওশন হক প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিল প্রেসক্লাবের সদস্য সুলতানা রহমানের নতুন জীবন শুরুকে স্বাগত জানিয়ে কেক কাটা। এ সময় সুলতানার বর শাহিন পারভেজও উপস্থিত ছিলেন।

আরো উল্লেখ্য, ঢাকার দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম একের পর এক দুর্নীতিবিরোধী রিপোর্ট করে খ্যাতি লাভ করেছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি কারাবরণ করেছেন। তাঁর কারামুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকরা বিক্ষোভ প্রতিবাদ করেছেন। নিউইয়র্কেও তাঁর গ্রেফতার ও কারামুক্তির দাবিতে বাংলাদেশী সাংবাদিকরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। তাঁর পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি একাধিক আন্তর্জাতিক পুরষ্কার লাভ করেছেন। খবর ইউএনএ’র।

শেয়ার করুন