নিউইয়র্ক     শনিবার, ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ  | ১৫ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ইউরোপ নিয়ে ম্যাক্রোঁর ভিশন কতটা বাস্তবসম্মত ?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৩ | ০৬:০৩ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৩ | ০৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
ইউরোপ নিয়ে ম্যাক্রোঁর ভিশন কতটা বাস্তবসম্মত ?

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ (ফাইল ছবি)

ছয় বছর আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়নের সার্বভৌমত্বের বিষয়ে কথা বলেছিলেন। ইইউতে বারবার ‘কৌশলগত স্বশাসন’ কথাটা ব্যবহার করা হয়। দু’টির মানে একই। আর তা হলো- গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক ও আর্থিক বিষয়ে অন্য কোনও দেশের মুখাপেক্ষী না থেকে ইইউ নিজের মতো করে নীতি গ্রহণ করতে পারা। এটাই ইইউ পার্লামেন্টের থিংক ট্যাংকের বক্তব্য।

সম্প্রতি চীন সফর সম্পন্ন করে ফেরার পথে ম্যাক্রোঁ আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কাছে আবার ইইউয়ের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নটি তুলেছেন। তাইওয়ান নিয়ে তার মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে। ম্যাক্রোঁ সেখানে বলেছেন, ইইউকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কম করতে হবে। সব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লাইন নেওয়ার প্রবণতা থেকেও সরে আসতে হবে।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে ইইউয়ের সার্বভৌমত্ব নিয়ে তার ভিশন কী, সেটা বলেছেন ম্যাক্রোঁ। গত মঙ্গলবার হেগে ম্যাক্রোঁ আর্থিক সার্বভৌমত্বের কথা বলেছেন। প্রশ্ন হলো, তার এই মত কি রূপায়ণ করা যেতে পারে?

চীনের ওপর ইইউয়ের নির্ভরতা

প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর আর্থিক স্বনির্ভরতার পাঁচটি স্তম্ভ আছে। আর তা হলো- প্রতিযোগিতা, শিল্প নীতি, বাজার সুরক্ষা, বাণিজ্যিক সম্পর্কে পারস্পরিক সুবিধা দেওয়ার নীতি এবং সহযোগিতা। তার মত হলো, ইইউকে সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক দামে ভালো মানের জিনিস উৎপাদন করতে হবে। এজন্য ইইউয়ের প্রতিটি দেশের মধ্যে সম্পূর্ণ সহযোগিতা দরকার। তিনি ইইউয়ের দেশগুলোর সাধারণ শিল্প নীতির পক্ষে। এই নীতি বাজারকে আরও শক্তিশালী করবে। আর পরিবেশ নিয়ে ইইউয়ের লক্ষ্যপূরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির ওপর জোর দিতে হবে।

আর এখানেই চীনের ওপর ইইউয়ের নির্ভরশীলতা সামনে আসে। কলম্বিয়ার বার্সেলোনা সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের গবেষক কারনে কোলোমিনা বলেছেন, ‘ডিজিটাল ও গ্রিন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ইইউ চীনের ওপর নির্ভরশীল। সম্প্রতি ইইউ কমিশন একটা নতুন আইন প্রস্তাব করেছে। সেই আইনে খুব জরুরি কাঁচামাল নিয়ন্ত্রণ করার কথা থাকবে।’ এই গবেষকের মতে, ‘এই ধরনের আইন দ্রুত রূপায়ণ করা সম্ভব কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। বিশেষ করে, ইইউ যখন ইতোমধ্যেই এই ব্যাপারে চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।’

নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল

২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ যখন ইউরোপের সার্বভৌমত্বের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন, তখন তিনি ইউরোপের যৌথ বাহিনী, সাধারণ প্রতিরক্ষা বাজেট, অ্যাকশনের জন্য যৌথ পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার একমাস পর ইউরোপের নেতারা আবার তাদের সার্বভৌমত্বের কথা বলেন। তারা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ইইউয়ের শক্তি বাড়াবার কথা বলেন। ন্যাটোর দায়বদ্ধতা মেনে নিয়ে এই কাজ করার কথা বলেন।

জার্মান কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশনসের গবেষক বেঞ্জামিন তালিস বলেছেন, ‘ম্যাক্রোঁ যে পথের কথা বলেছেন তা বাস্তসম্মত নয়। এই যে সার্বভৌমত্বের কথা বলা হচ্ছে, তা মিথ ছাড়া আর কিছুই নয়। তার মতে, ম্যাক্রোঁ যুক্তরাষ্ট্রের থেকে আরও স্বশাসন চেয়েছেন।’ তার মতে, ‘নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতা ইউরোপের নেই। ইউরোপের হাতে আধুনিক কামান আছে, সেনা আছে, কিন্তু এরপরও তারা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু অস্ত্রসম্ভার তাদের সুরক্ষা দেয়।’

ইউরোপের ভেতর বিরোধ

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি ইউরোপ গিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোট হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভিত্তি। তালিস মনে করেন, ‘প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁও গোটা ইউরোপের হয়ে কথা বলেননি। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস তো রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের আগের পরিস্থিতিতে ফিরতে চান। আর ম্যাক্রোঁ চান, ফ্রান্সকে বড় শক্তি বানাতে।’

তালিসের দাবি, ‘ম্যাক্রোঁর এই দাবি, ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ বাড়াতে পারে।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, ম্যাক্রোঁ যা বলছেন, তা হওয়ার সম্ভাবনা কম। ফরাসি এই প্রেসিডেন্ট শুধু এটা বলতে পারেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখি’। তবে তার স্বপ্ন সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। সূত্র : ডয়চে ভেলে

শেয়ার করুন