ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ার ড্রোন হামলা অব্যাহত আছে। সোমবারও কিয়েভের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন টার্গেটে বেশ কয়েকটি ড্রোন হামলা করেছে মস্কো। ইরানের তৈরি এই কামিকাজি ড্রোন এখন ইউক্রেনের জন্য নতুন আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি অভিযোগ করেছিলেন, ইরান থেকে এমন শত শত ড্রোন পেয়েছে রাশিয়া। তিনি একে ‘শয়তানের সঙ্গে হাত মেলানো’ বলে বর্ণনা করেন। কিয়েভের মেয়র জানিয়েছেন, সোমবারের হামলায় অন্তত তিন জন নিহত হয়েছেন। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
এদিকে রাশিয়ার অব্যাহত ড্রোন হামলা নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের হেড অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়েরমাক বলেন, মস্কো ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছে তার প্রমাণ এই ড্রোন হামলা। তবে হামলা শুধু কিয়েভেই নয় বরঞ্চ গোটা ইউক্রেনজুড়েই চলছে। বন্দর শহর মিকোলাইভের একটি তেলের ট্যাংক উড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া। এই হামলায়ও ইরানি ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। সোমবারের হামলায় রাশিয়া ইউক্রেনের জ্বালানির মজুদকে টার্গেট করে।
হামলা হয় ইউক্রেনের জাতীয় জ্বালানি কো¤পানিতে। ধারণা করা হচ্ছে, মস্কো চাইছে ইউক্রেনকে শীতের আগে বিপর্যস্ত করে তুলতে। বিবিসির খবরে বলা হয়, আগামি কয়েক মাস এখন ইউক্রেনীয়দের জন্য কঠিন হতে চলেছে। কারণ এ হামলায় যে ক্ষতি হয়েছে তা ঠিক করতে অনেক সময় লাগবে। এরইমধ্যে কর্তৃপক্ষ ইউক্রেনীয়দের জ্বালানি খরচ কমিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে।
দীর্ঘদিন ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরগুলোতে হামলা চালায়নি রাশিয়া। ফলে এই শহরগুলোকে নিরাপদ ভাবতে শুরু করেছিল দেশটির বাসিন্দারা। তবে সম্প্রতি ক্রাইমিয়া সেতুতে ট্রাক হামলার পর রূপ বদলে ফেলে রাশিয়া। ‘কিয়েভ নিরাপদ শহর’ এমন ধারণা বদলে দিয়েছে দেশটি। বিবিসি যদিও বলছে, কিয়েভের বাসিন্দারা একের পর এক আক্রমণে যতটা না ভীত তার থেকে বেশি ক্ষুব্ধ। মস্কো হয়ত যুদ্ধক্ষেত্রে বড় কোনো সফলতা পাচ্ছে না কিন্তু এই কামিকাজি ড্রোনগুলো এখন নতুন আতঙ্ক হয়ে উঠছে।
এক সপ্তাহ আগে ইউক্রেনের প্রায় সবগুলো শহরে মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালায় মস্কো। এতে ইউক্রেনের জ্বালানি ও যোগাযোগ অবকাঠামোগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়। যদিও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এরপর বলেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আর বড় রকমের হামলা চালানোর প্রয়োজন মনে করছে না রাশিয়া। কিন্তু পুতিনের ওই বক্তব্যের পরই রাশিয়ার বেলগোরদ শহরে রকেট নিক্ষেপ করে ইউক্রেন। এরফলে আবারও ইউক্রেনে ড্রোন ও মিসাইল হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। তবে এই দফায় ইরানি ড্রোনের উপরই বেশি নির্ভর করছে দেশটি।
এদিকে সিএনএন জানিয়েছে, রাশিয়ার একের পর এক হামলায় কিয়েভে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত চারবার বড় ধরনের হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে শহরের সামরিক প্রশাসন। কিয়েভের সামরিক প্রশাসন টেলিগ্রামে বিবৃতিতে জানিয়েছে, হামলায় শেভচেনকিভস্কি এলাকার আবাসিক ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হতাহতের সংখ্যা এখনও স্পষ্ট হওয়া যায়নি। প্রাণ বাঁচতে ভবনের আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেন অনেকে। বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন বেজে উঠে। একাধিক বিস্ফোরণের পর সেনা ও পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়।
আবাসিক ভবনধসের বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যগুলো। সোমবারে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, কামিকাজি ড্রোন এগিয়ে আসছে কিয়েভের অভ্যন্তরে। টেলিগ্রাম পোস্টে ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রীর উপদেষ্টা আন্তন গেরাশচেঙ্কো বলেন, হামলা এখনও চলছে। ড্রোন দক্ষিণ ও পূর্ব দিক থেকে কিয়েভের দিকে এসেছে। সবাই আশ্রয়কেন্দ্রে থাকুন। ইউক্রেনের এক বিমান বাহিনী কর্মকর্তা জানান, দেশের দক্ষিণ দিক থেকে এই ড্রোনগুলো উড়ে আসছে।
কিয়েভে আক্রমণের আগেই মিকোলাইভে হামলা হয় এবং সেখানে তিনটি ট্যাংক ধ্বংস করা হয়। এই ড্রোনগুলোর গতি খুবই কম তবে এগুলো ব্যাপক কার্যকরি। এগুলোকে ধ্বংস করতে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছিল কিন্তু সেগুলো ব্যর্থ হয়েছে। বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, বন্দুক দিয়ে গুলি করে রাশিয়ার এসব ড্রোন ধ্বংসের চেষ্টা করছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী। একটি ড্রোন ধ্বংসের ভিডিও পাওয়া গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
এ হামলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, শত্রুরা আমাদের শহরগুলোতে হামলা চালাতে পারবে কিন্তু তারা আমাদের ভাঙতে পারবে না। তবে সোমবারের হামলায় রাশিয়ার আর কি কি টার্গেট ছিল তা এখনও জানা যায়নি। কিয়েভের মেয়র জানিয়েছেন, বেসামরিক ভবনে আঘাত হেনেছে একটি ড্রোন। রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কিয়েভের প্রধান রেল স্টেশনে হামলা হয়েছে। হামলা হওয়া ড্রোনগুলোর ডানায় লেখা ছিল ‘বেলগোরদের জন্য’। এ থেকে ধারণা করা যায়, রাশিয়ার বেলগোরদ শহরে ইউক্রেনের রকেট ছোড়ার জবাবেই এই ড্রোন হামলা চালানো হচ্ছে।