Vector red box Abstract background Gray blank. EPS 10
২০১৬ সালে রাশিয়ান দলের মার্গারিতা মামুন, বাংলাদেশের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুনের কন্যা, রাশিয়ায় জন্ম নেয়া মেয়ে অলিম্পিকে সোনা জিতেছিল। আমরা অবশ্যই গর্বিত বোধ করেছিলাম এই কন্যার সাফল্যে।
কিন্তু আমার কথা সেখানে না। এই কন্যার বিজয় কে উদযাপন করতে গিয়ে কিন্তু নিজেদের ভণ্ডামি একেবারে নগ্ন, ঘৃণ্যভাবে প্রকাশ পেয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশের হয়তো শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ-ই জানতো না রিদমিক জিম্যান্সটিক্স কি। নিজের দেশের কোন কন্যা যদি এমন সংক্ষিপ্ত পোশাক পরে নাচতো তবে দেশপ্রেমিক হাজার হাজার, না না, লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি আছেন যারা গিয়ে তাঁর গায়ে গিয়ে আলকাতরা মেখে দিতো, কিম্বা ধর্ষন করতো আর খুন করতো তনু বা আফসানার মতো। হায় হায় রব তুলে আসতো মমিন মুসলমানেরা, করে কী করে কী বলে।
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া মেয়েদের কি প্রতিভা নাই, আলিম্পিকে সোনা জয়ের? অবশ্যই আছে। আমি নিজের চোখে দেখেছি কতো অসাধারণ কণ্ঠের অধিকারী মেয়েকে গান ছেড়ে দিতে, কারণ স্বামীর পরিবার চায় না, অভিনয় ছেড়ে দিতে, বা নাচ ছেড়ে দিতে, কিম্বা খেলাধুলা বা ক্রীড়া ছেড়ে দিতে। নিজের দেশের কন্যাদের হামানদিস্তা দিয়ে পিষিয়ে, বোরখার অন্তরালে ঢুকিয়ে রাখবো আর অন্যদেশে বড় হওয়া কন্যাকে নিয়ে আদিখ্যাতা করবো, এর চেয়ে বড় ভণ্ডামি আর কী আছে?
তেমনি ব্রাউন ইনিডিয়ান বাবা মার ছেলে যিনি মূলত বৃটিশ, তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বে নাচার খুব কারণ আছে কী? তিনি বৃটিশ হিসাবেই স্বার্থরক্ষা করবেন। সমগোত্রীয় (ভারতবর্ষ) দের জন্যে যদি ক্ষমা চান দু’শ বছরের জুলুমের, যদি ক্ষমা চান জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের জন্যে, তাহলে একটু নাচতে পারেন।
নিজের দেশের মানুষজন যখন বিদেশে সাফল্য পায় একটু জিগ্যেস করে দেখেন দেশিরা কী করেন ! আমি আমেরিকার ১৫০ টি মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশি ডিন লেভেলে কাজ করি (সমস্ত বিনয় ঢেলে বলছি, যদি অন্য কেউ থাকেন জানিয়েন, আমি শুধরে নেব)। কিন্তু আমাকে যদি বলেন এই অর্জনের পেছনে সবচেয়ে বড় বাঁধা কী ছিল? আমি এক বাক্যে বলবো, কিছু বাংলাদেশি। এরা হিংসাবশত বেনামি চিঠি, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে। যদিও পারেনি কিন্তু ইনটেনশনই তো যথেষ্ঠ। কিন্তু এরা হয়তো আমার চারপাশেই বন্ধু বেশে ছিল। কেউ আবার ভাববেন না আমি ঋষি সুনাকের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করছি। শুধু উদাহরণ দিলাম।
আরেকটা ভন্ডামি ইন্ডিয়ান হিন্দুদের। তাঁরা বৃটিশদের কৃপায় মাইনরিটি হিন্দুর জয় দেখছে, ঋষির দীপাবলির ছবি ভাইরাল, গীতা হাতে শপথ নেয়ার জন্যে নাচছে (কিছু হিন্দু)। কিন্তু নিজের দেশে মাইনরিটি মুসলমানদের সুযোগ পেলেই কচু কাটা করে একটি গোষ্ঠি, অচ্ছুতদের এখনো জায়গা দেয় না কেউ কেউ। আজকে বৃটিশরা ডাইভার্সিটি নিয়ে এতোদূর এগিয়ে বলেই যে অর্জন হলো তার কৃতিত্ব আপনাদের না। নিজেদের উন্নত, ইনক্লুসিভ করে গড়ে তুলুন। নিজের দেশে মাইনরিটি তা হোক ধর্মীয় বা বিশ্বাস-অবিশ্বাস বা সেক্সুয়াল প্রেফারেন্স ভিত্তিক তাতে কিছু যায় আসে না, তাঁদের অধিকার দেয়া শিখুন। তারপর নাচুন।
আর ভন্ডামি থেকে মুক্তির প্রথম ধাপ হলো আয়নায় নিজেকে দেখে স্বীকার করে নেয়া যে এটা ভণ্ডামি। ঋষি সুনাক কে অভিনন্দন এই আয়নায় মুখ দেখার মতো সাফল্য ঘরে তোলার জন্যে। -অক্টোবর ২৫, ২০২২