ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনির মৃত্যুতে দেশজুড়ে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বিক্ষোভের পর দেশটি নৈতিকতা পুলিশকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে ইরান। ইরানের অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জাফর মনতাজেরির উদ্ধৃতি দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ।
শনিবার একটি ধর্মীয় সম্মেলনে মনতাজেরি বলেন, বিচার বিভাগের সাথে নৈতিকতা পুলিশের কোন সম্পর্ক নেই এবং এটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নারীদের মাথা ঢেকে রাখতে হবে এমন আইন পরিবর্তন করা দরকার কিনা সে বিষয়ে সংসদ এবং বিচার বিভাগ উভয়ই কাজ করছে।
উল্লেখ্য, নৈতিকতা পুলিশ যা আনুষ্ঠানিকভাবে গাশত-ই এরশাদ বা ‘গাইডেন্স পেট্রোল’ নামে পরিচিত। ২০০৬ সালে কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের শাসণামলে নারীদের ‘শালীনতা এবং হিজাবের সংস্কৃতি’ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এরআগে ইরানে ২ মাসের বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ২০০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বলে এক আনুষ্ঠানিক বার্তায় জানিয়েছে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী। তবে এই সংখ্যা আন্তর্জাতিক সংস্থার দেয়া তথ্যের চেয়ে অনেক কম।
নরওয়ে-ভিত্তিক মানবাধিকার গোষ্ঠী আইএইচআর বলেছে, বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১০০ জন নারী ও শিশু রয়েছে। এদিকে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি শনিবার টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে বলেন, ইরানের প্রজাতন্ত্র ও ইসলামিক ভিত্তি সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত, তবে সংবিধান বাস্তবায়নের পদ্ধতি রয়েছে যা নমনীয় হতে পারে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেফাজতে মারা যান মাসা আমিনি। ঠিকমতো হিজাব না পরায় ১৩ সেপ্টেম্বর রাজধানী তেহরানে তাকে ইরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করেছিল। পুলিশের হেফাজতে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর তাকে হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনদিন কোমায় থাকার পর মৃত্যু হয় তার। প্রথমে বিক্ষোভ ইরানের কুর্দি অধ্যুষিত উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে শুরু হলেও ক্রমে তা দেশটির ৮০টি শহর ও নগরে ছড়িয়ে পড়ে। যা ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর থেকে দেশটিতে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ এটি। সূত্র: এএফপি