নিউইয়র্ক     শনিবার, ১২ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ট্রাম্পের আমলের চেয়ে এখন ভালো না খারাপ

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০১:১৮ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০১:১৮ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ট্রাম্পের আমলের চেয়ে এখন ভালো না খারাপ

জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে দেশটির অর্থনীতি নিয়ে একটি প্রশ্ন বারবার ঘুরেফিরে আসছে। তা হলো, নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, নাকি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শাসনামলে দেশটির অর্থনীতি বেশি ভালো ছিল।

নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস দাবি করেন, ‘আমাদের অর্থনীতি অনেক সূচকেই বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী।’

তবে কমলার প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই দেশের অর্থনীতিকে সবচেয়ে শক্তিশালী করেছেন। কিন্তু বাইডেন–কমলা প্রশাসন সেটি ধ্বংস করেছে।

দুই প্রেসিডেন্টের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি কেমন ছিল, কয়েকটি সূচকে বিষয়টির তুলনামূলক একটা চিত্র তুলে ধরা যাক:

বাইডেনের শাসনামলের প্রথম দুই বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ২০২২ সালের জুনে দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ১ শতাংশ। এ ঘটনায় ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে।’ তবে ট্রাম্পের এ দাবি সত্য ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে ৯ শতাংশের ওপরে মূল্যস্ফীতি ছিল ১৯৮১ সালে। মার্কিন ইতিহাসে ওই মূল্যস্ফীতি ছিল কয়েকটি ক্ষেত্রে বাইডেনের সময়ের চেয়ে আরও বেশি।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
করোনা মহামারির প্রভাবের কারণে দুই প্রেসিডেন্টের সময়কার অর্থনৈতিক অবস্থার তুলনা করা জটিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদ্যমান মজুরিতে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে উঠলেও উভয় প্রেসিডেন্ট উল্লেখযোগ্য কিছু অর্থনৈতিক সাফল্য দাবি করতে পারেন।

করোনা মহামারি চলাকালে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ধস নামে। মহামারির প্রকোপ কমলে ট্রাম্প প্রশাসনের অধীন মার্কিন অর্থনীতি শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পশ্চিমা অনেক দেশের চেয়ে আরও ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়ায় অর্থনীতি।

বাইডেনের সময়ও অর্থনীতির এ ধারা অব্যাহত ছিল। জিডিপির মানদণ্ডে যুক্তরাষ্ট্র শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি–৭–এর সদস্যদের মধ্যে করোনা–পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে সবচেয়ে শক্ত অবস্থানে যেতে সক্ষম হয়।

তবে, ট্রাম্পের চার বছরের শাসনামলে দেশের অর্থনীতি ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল না, যেমনটা তিনি দাবি করে থাকেন।

২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৩ শতাংশ। এ সময়ের মধ্যে ছিল, করোনা মহামারির কারণে দেশের অর্থনীতি মন্দায় পড়া ও তা থেকে উত্তরণের কালও।

বাইডেন প্রশাসনের অধীন এখন পর্যন্ত এ প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ, ট্রাম্প শাসনামলের মতোই।

অথচ ট্রাম্প ও বাইডেনের শাসনামলের আগে এমন এক সময় ছিল, যেমন ১৯৭০–এর দশকে, যখন জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল উল্লেখ করার মতো।

মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি যে হারে বাড়ছে, তাতে চলতি নির্বাচনী প্রচারে তা এক বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে। বাইডেনের শাসনামলের প্রথম দুই বছরে এ স্ফীতি বেড়ে ২০২২ সালের জুনে দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ১ শতাংশ।

এ ঘটনায় ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে।’
তবে ট্রাম্পের এ দাবি সত্য ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে ৯ শতাংশের ওপরে মূল্যস্ফীতি ছিল ১৯৮১ সালে। মার্কিন ইতিহাসে ওই মূল্যস্ফীতি ছিল কয়েকটি ক্ষেত্রে বাইডেনের সময়ের চেয়ে আরও বেশি।

বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ৩ শতাংশ। অবশ্য ট্রাম্প যখন হোয়াইট হাউস ছাড়েন, সেই সময়ের তুলনায় এটি এখনো কিছুটা বেশি।

আবার, অর্থবছরের শেষে ২০২২ সালের আগস্টে মুদিপণ্যের দামও উদাহরণ হিসেবে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে।

বাইডেন প্রশাসনের সময় এটিই ছিল পণ্যের সর্বোচ্চ দাম। তখন থেকে এখন পর্যন্ত কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে পণ্যমূল্য। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে এ বছরের জুলাই পর্যন্ত এসব পণ্যের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ১ শতাংশ।

করোনা মহামারি ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পণ্যের উৎপাদন এবং সরবরাহব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটায় ২০২১ ও ২০২২ সালে উচ্চ মূল্যস্ফীতির শিকার হয়েছে সারা বিশ্বই। একই প্রবণতা ছিল যুক্তরাষ্ট্রেও। তবে কিছু অর্থনীতিবিদ বলছেন, ২০২১ সালে বাইডেন ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের ‘আমেরিকান রেসকিউ প্ল্যান’ পাস করেন। এতে অর্থনীতিতে অর্থের প্রবেশ ঘটলে তা পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

কর্মসংস্থান
কর্মসংস্থান বৃদ্ধিকে নিজেদের অন্যতম বড় সাফল্য হিসেবে বারবারই তুলে ধরছে বাইডেন প্রশাসন।

কোভিডের কারণে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বহু মানুষ চাকরি হারান। এর আগে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট মেয়াদের প্রথম তিন বছরে কর্মসংস্থান খাতে যুক্ত হয়েছিল ৬৭ লাখ নতুন চাকরি। এতে দেশের মোট শ্রমশক্তির ৮০ শতাংশ কর্মসংস্থানের আওতায় আসে।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর এ খাতে এখন পর্যন্ত যুক্ত হয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ চাকরি।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে যেকোনো প্রেসিডেন্টের শাসনামলের তুলনায় ও যেকোনো পয়েন্টে কর্মসংস্থান খাতের এ বৃদ্ধি এটিই সবচেয়ে বেশি।’

১৯৩৯ সাল থেকে পাওয়া রেকর্ডের তথ্য–উপাত্ত বিবেচনায় বাইডেনের এ দাবি সত্য। এ বিষয়ে জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মার্ক স্ট্রেইন বলেন, ‘২০২০ সালে ট্রাম্প যদি জিততেন, তবু কর্মসংস্থান খাতে অনেক চাকরি যুক্ত হতো। তবে (কোভিড–পরবর্তী সময়ে) শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে গতি আনতে বাইডেনের আমেরিকান রেসকিউ প্ল্যান এক বড় ভূমিকা রেখেছে।’

কর্মসংস্থান খাতে গত জুলাইয়ে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি কম হলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে আকস্মিক নিম্নমুখী প্রবণতা শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এতে পুঁজিবাজারেও প্রভাব পড়ে। অবশ্য তখন থেকে কর্মসংস্থান খাত এখনো স্থিতিশীল রয়েছে।

বেতন–মজুরি
ট্রাম্পের সময় কর্মীদের বেতন–মজুরি বেড়েছিল। বৃদ্ধির ওই হার ছিল তাঁর পূর্বসুরি বারাক ওবামার আমলের অনুরূপ। ট্রাম্পের সময় মজুরি বৃদ্ধির এ প্রবণতা ছিল করোনা মহামারি আঘাত হানার আগপর্যন্ত।

করোনা মহামারি চলাকালে ২০২০ সালের শুরুতে কর্মীদের মজুরি দ্রুত বেড়েছিল। মজুরি হঠাৎ বৃদ্ধির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ছিল মূলত নিম্নস্তরের কর্মীদের সঙ্গে। এতে সব শ্রেণির কর্মীর গড় মজুরি বেড়ে যায়।

বাইডেনের সময় কর্মীদের সাপ্তাহিক গড় আয় বেড়েছে। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের খাপ খাইয়ে চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সূত্র: প্রথম আলো।

শেয়ার করুন