‘বাকিংহাম প্যালেস’, যা সমগ্র ইংল্যান্ডের গর্ব। ঊনবিংশ শতকে বিশ্বের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানই কোনো না কোনোভাবে ব্রিটিশ রাজত্বের অধীনে ছিল। আর যে ভবনে বাস করতেন সেই রাজত্বের রানি, তা দেখার ইচ্ছা কার না জাগে? এছাড়া ভবনটি কেমন? কী কী রয়েছে তাতে? তা নিয়ে জনসাধারণের কৌতুহলেরও যেন অন্ত নেই!
আগে ‘বাকিংহাম হাউজ’ হিসেবে পরিচিতি থাকলেও পরবর্তীতে নাম বদলে হয় ‘বাকিংহাম প্যালেস’। ১৭০৩ সালে বাকিংহামের সর্বপ্রথম ডিউক ‘জন শেফিল্ড’ ওয়েস্ট মিনিস্টারের একটি বাড়ি কিনে নেন এবং তা ভেঙে ওই জায়গাতেই গড়ে তোলেন ‘বাকিংহাম হাউজ’। ১৭৬১ সালে বাড়িটি কিনে নেন তখনকার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাজ্যাধিপতী রাজা তৃতীয় জর্জ। এরপর ১৮৩৭ সালে রানি ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে আরোহণের পর বাকিংহাম হাউজকে তার আনুষ্ঠানিক বাসভবন করে নেন। তখন থেকেই বিভিন্ন সময় সংস্কারের মাধ্যমে বাড়িটিকে রাজপ্রাসাদে পরিণত করা হয়।
এদিকে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মারাত্মক সব ক্ষয়ক্ষতি থেকে এই প্রাসাদ বেঁচে গেলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাকিংহাম প্যালেসের যথেষ্ট ক্ষতিসাধন হয়েছিল। নাৎসি বাহিনী ৫ বার এই প্রাসাদে বোমা ছুড়েছিল। তবে সৌভাগ্যক্রমে রাজা ও রানি দুজনই ছিলেন অক্ষত। তৎকালীন সময়ে এসব আক্রমণের খবর রাজপরিবার সবসময় মিডিয়ার আড়ালে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল।
এছাড়া জাঁকজমকপূর্ণ এ প্রাসাদটি তৈরি করা হয়েছে বিশেষ ধরণের উলিটিক চুনাপাথর দিয়ে। ২০১৭ সালের ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’ জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বালি বা কাঁকর নয়; বরং ২০০ মিলিয়ন বছরের পুরনো প্রাগৈতিহাসিক যুগের অসংখ্য আণুবীক্ষণিক জীবের দেহাবশেষ দিয়ে তৈরি হয়েছে এসব চুনাপাথর! সবকিছু মিলিয়ে আর্থিকভাবে হিসাব করলে প্রাসাদটির মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৪৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
বিশাল এই বাকিংহাম প্যালেসের আয়তন ৮,২৮,৮১৮ স্কয়ার ফুট! এতে আছে ৭৭৫ টি রুম। যার মধ্যে স্টেট রুম ১৯টি ; অতিথি এবং রাজ পরিবারের সদস্যদের জন্য রয়েছে ৫২টি বেড রুম। ১৮৮টি স্টাফ রুম, ৯২ টি অফিসরুম এবং ওয়াশরুম। প্রাসাদের দরজা এবং জানালার সংখ্যা পর্যায়ক্রমে ১,৫১৪ টি এবং ৭৬০ টি।
এদিকে, লন্ডনের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত বাগানও ‘বাকিংহাম প্যালেস গার্ডেন’। ৪২ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই বাগানে আরও আছে একটি টেনিস কোর্ট এবং ৩ একর জলাশয়। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ২০০২ সাল থেকে এই গার্ডেনে আড়ম্বরপূর্ণ পার্টির আয়োজন করা শুরু করেছিলেন।
এখানকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কক্ষটি হচ্ছে রানির ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য একটি কক্ষ যা একেবারে প্রাসাদের দক্ষিণে বিশেষভাবে সংরক্ষিত। এই ভবনের স্টেট রুমগুলো রাজকীয় ও জাতীয় কাজকর্মের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রানির গ্যালারিতে রয়েছে বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের কাজ। প্রায় সাড়ে চার লাখ ছবি রয়েছে রানির সংগ্রহশালায়। এছাড়া প্রদর্শনীর জন্য রাখা আছে বিভিন্ন সময়ে সংগ্রহ করা রানির মূল্যবান মনি-মুক্তাগুলোও।
জনসাধারণ চাইলেই বাকিংহাম প্যালেসে প্রবেশ করতে পারে। তবে প্রবেশের সময় হচ্ছে জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। আর এই প্রবেশ টিকেটের মূল্য ২০ থেকে ৩০ ইউরো। পুরো প্রাসাদটি একবার ঘুরে দেখতে সময় লেগে যায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
পরিচয়/সোহেল