মিয়ানমারের ওপর শক্তি প্রয়োগ না করে সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শনের মতো কৌশলী পথে হাঁটার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে দেশটির সামরিক তৎপরতার জবাব দিতে হবে কূটনৈতিকভাবেই। রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ, জাতিসংঘকে জানানোর পরিকল্পনার বাইরে এখন পর্যন্ত বড় কোনো বিকল্প ছিল না ঢাকার জন্য। তাদের মতে, মিয়ানমার ফাঁদ তৈরি করলেও দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থেই এড়িয়ে চলতে হবে সংঘাত।
গত তিন সপ্তাহে বেশ কয়েক দফা বাংলাদেশের ভেতরে মিয়ানমারের মর্টার শেল ও গোলা এসে পড়ার ঘটনায় উদ্বেগ ছড়াচ্ছে সীমান্ত এলাকায়। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে যুদ্ধবিমান ঢুকে পড়াসহ মিয়ানমারের সামরিক উসকানির জবাব এখন পর্যন্ত কূটনীতির ভাষাতেই দিচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে এখন পর্যন্ত চার দফা ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা। কিন্তু তাতেও নেপিদো নিবৃত্ত না হওয়ায় জাতিসংঘকে জানানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারের ফাঁদে পা না দিয়ে এখন পর্যন্ত সঠিক পথেই আছে বাংলাদেশ। তাদের মতে, নিজেদের স্বার্থেই সংঘাতে না জড়িয়ে অন্য সব বিকল্প পথেই খুঁজতে হবে সমাধান। একই সঙ্গে পরামর্শ দিচ্ছেন নেপিদোর ওপর চাপ বাড়াতে চীন-ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জোট আসিয়ানভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বোঝাপড়া করার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে জোর তৎপরতা চালানো দরকার। কারণ, এ ঘটনার ভিকটিম কিন্তু ভবিষ্যতে আসিয়ানই হবে। যুদ্ধ কারো জন্যই কাম্য নয়। বাংলাদেশ সরকারের কূটনীতির সঙ্গে সামরিক যে প্রস্তুতি বা প্রস্তাবনাগুলো আছে, সেগুলো জোরদার করা প্রয়োজন।
তারা বলছেন, কূটনীতিরও বিভিন্ন পর্যায় আছে। এতে একটা পর্যায় হচ্ছে, আমাদের আঞ্চলিক শক্তিগুলোর ভূমিকা। তারা এ সংঘাত বন্ধ করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু তাদের এক্ষেত্রে তেমন আগ্রহী দেখছি না। তাই আমাদের কূটনীতিকে প্রসারিত করতে হবে।
প্রথাগত কূটনীতির পাশাপাশি সামরিক কূটনীতির পথে হাঁটারও পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। সেক্ষেত্রে সংঘাতে না জড়িয়ে সামরিক শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে মিয়ানমারকে দেয়া যেতে পারে সতর্কবার্তা।
এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো কোনো পক্ষ বা কোনো কোনো দেশ বাংলাদেশকে একটি যুদ্ধের মধ্যে ঠেলে দিতে চায় কি-না, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। যুদ্ধ এড়িয়ে সমাধান খুঁজে বের করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেক্ষেত্রে যে পথে বাংলাদেশ হাঁটছে, সেটা সঠিকই আছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে হাঁটতে হবে বিচক্ষণতার সঙ্গে; রোহিঙ্গা ইস্যু, জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ সব দিক হিসাব-নিকাশ করে।
পরিচয়/সোহেল