প্রতিবছর সামার এলেই গোটা আমেরিকাজুড়ে উৎসবে মেতে ওঠেন বাংলাদেশিরা। সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, পিকনিক, কালচারাল ইভেন্ট কিংবা বইমেলা, এমন অনেক কিছুই থাকে তাদের আয়োজনের ডালিতে। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সময় রবিবার (২৪ জুলাই) নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে অনুষ্ঠিত হলো জমজমাট পথমেলা ও ঈদ পুনর্মিলনী উৎসব। বাংলাদেশি আমেরিকান ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক সোসাইটি ইউএসএ ইনক (ব্যান্ডস) আয়োজিত পথমেলাকে ঘিরে এদিন ব্রঙ্কসের পার্ডি স্ট্রিটে ঢল নেমেছিল প্রবাসী বাংলাদেশিদের। আর সেখানে উপস্থিত হয়ে মেলাপ্রেমীদের আরও প্রাণবন্ত করে তোলেন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস।
মাথার ওপর প্রখর রোদ এবং তাপমাত্রা ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাট উপেক্ষা করে বাংলাদেশিরা দলে দলে যোগ দেন ব্রঙ্কসের পথমেলায়। মেলার প্রধান অতিথি সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস বাংলাদেশি আমেরিকানদের ভাগ্যোন্নয়নে আরও পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে তিনি নিউইয়র্ক সিটির অপরাধ দমনে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করারও অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বাংলাদেশিদের নিরাপত্তায় বিশেষ নজর দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
এর আগে বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবু জাফর মাহমুদ। আয়োজকদের দাবি- মেলায় উপস্থিত হয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নতুন ইতিহাস, উৎসাহ ও উদ্দীপনার জন্ম দিয়েছেন মেয়র এরিক অ্যাডামস। এজন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে মেয়রকে।
মেলার আয়োজক ব্যান্ডসের প্রেসিডেন্ট মো. সোলায়মান আলী বলেন, নিউইয়র্ক প্রবাসী বাঙালিদের জন্য মেয়র নতুন ইতিহাস রচনা করলেন। এই প্রথম নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক এডাম মূলধারার সংগঠন বাংলাদেশি আমেরিকান ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক সোসাইটি ইউএসএ ইনক (ব্যান্ডস) আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী পথমেলায় উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রঙ্কস বরো প্রেসিডেন্ট ভেনেসা গিবসন, স্টেট সিনেটের গুস্তাভো রিভেরা, অ্যাসেম্বলিওম্যান নাতালিয়া ফার্নান্দেজ, কাউন্সিলম্যান আমান্দা ফারিয়া ও কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ-এর কমিউনিটি লিয়াজোঁ নীপা, যুক্তরাষ্ট্র সফররত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট নূর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এবং বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু, ঢাকা দক্ষিণ সিটি মতিঝিল থানা থেকে নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিনু রহমান ও ঢাকা দক্ষিণ ধানমণ্ডি থানা ওয়ার্ড কাউন্সিলর শিরিন গাফফার উপস্থিত হয়ে ঈদ পুনর্মিলনী ও মেলা সাফল্যমণ্ডিত করেন।
মেলা মঞ্চে সংগঠনের সভাপতি ও বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ব্রোকার, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রবাসীকল্যাণ সম্পাদক মো. মোহাম্মদ সোলায়মান আলীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম মিয়ার পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পাইওনিয়ার বাংলা হোম কেয়ার সার্ভিসের সিইও আবু জাফর মাহমুদ, টাইটেল স্পন্সর সিপিএ আহাদ, ডায়মন্ড স্পন্সর ও রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর নুরুল আজিম, অ্য্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, বিশিষ্ট আইনজীবী মোহাম্মদ এন. মজুমদার, প্যারালিগ্যাল স্পন্সর মো. আলী ও ট্রাইল অ্যাটর্নি কেভিন পেরেজ, বোর্ড অব ট্রাস্টি জুনেদ আহমদ চৌধুরী, সংগঠনের সহ-সভাপতি জকি উদ্দিন চৌধুরী, মামুন টিউটোরিয়ালের কর্ণধার শেখ আল-মামুন, সংগঠনের সহ-সভাপতি কফিল উদ্দিন চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ শামীম আহমেদ, নতুন প্রজন্মের সামিহা বিনতে আলী।
উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূয়সী প্রশংসা করেন মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশিরা শক্তিশালী কমিউনিটিতে পরিণত হয়েছে। তারা নিউইয়র্ক সিটির উন্নয়নের অংশীদার। মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশীদের আগ্রহ দেখে মেয়র অভিভূত হন।
পথমেলায় মেয়রকে স্বাগত জানিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষে সংগঠনের সভাপতি মো. সোলায়মান আলী একটি সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন। এছাড়া কমিউনিটিতে বিশেষ অবদানের জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয় টাইটেল স্পন্সর সিপিএ আহাদ, ডায়মন্ড স্পন্সর রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর নুরুল আজিম, মেলার উদ্বোধক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ, খলিল বিরিয়ানির সত্ত্বাধিকারী খলিলুর রহমান ও মোহাম্মদ এন মজুমদারকে ।
গ্র্যান্ড স্পনসর রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর মো. আনোয়ার হোসেনসহ সকল স্পন্সরকারী প্রতিষ্ঠান ও বিশিষ্ট ব্যক্তি, অতিথিবৃন্দ, সাংবাদিক, সংগঠনের কর্মকর্তাবৃন্দসহ রাফেল ড্র প্রদানকারী ও উপস্থিত সকলকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সার্বিক সহযোগিতার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানান সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সকলের সার্বিক সহযোগিতার জন্য ব্যান্ডস প্রবাসে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে পেরেছে। অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পথমেলা বাংলাদেশিদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। করোনা মহামারীর মধ্যে ও শেষের দিকে দর্শকের উপচে পড়া ভিড় মেলাকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৃহত্তম মেলায় পরিণত করে। মেলার সাংস্কৃতিক পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করে সবাইকে মাতিয়ে রাখেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রিজিয়া পারভীন, প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী মরিয়ম মারিয়া, কামরুজ্জামান বকুল প্রমুখ। এছাড়া ছিল নৃত্য পরিবেশনা।
সবশেষে র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছিল আকর্ষণীয় পুরস্কার।