আগস্টে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক সরবরাহ টানা তৃতীয় মাসের মতো বেড়েছে। সরবরাহে ঊর্ধ্বমুখিতা অব্যাহত থাকলে আগামী বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা চাহিদাকে ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্ববাজারে ক্রমেই জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে আসছে। চলতি বছর দৈনিক চাহিদা ৫০ হাজার ব্যারেল এবং আগামী বছর ৪০ হাজার ব্যারেল করে বাড়বে। সম্প্রতি মাসভিত্তিক জ্বালানি তেলের বাজারবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)।
আইইএর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা দাঁড়াবে দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেলে। স্বাভাবিকের তুলনায় চাহিদা বৃদ্ধির গতি আরো কমার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু গ্যাসের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির কারণে ব্যবহারকারীরা বিকল্প হিসেবে জ্বালানি তেল ব্যবহারে ঝুঁকছেন। এ কারণে চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিক ও আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে স্বাভাবিকের তুলনায় চাহিদা দৈনিক সাত লাখ ব্যারেল করে বাড়বে।
সংস্থাটি বলছে, চীনে অর্থনৈতিক মন্দা এবং ওইসিডি দেশগুলোয় অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে পড়ার কারণে চাপের মুখে পড়েছে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা। বছরভিত্তিক চাহিদা প্রবৃদ্ধি গতি হারাচ্ছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে দৈনিক ৩৫ লাখ ব্যারেলের চাহিদা তৃতীয় প্রান্তিকে এসে দৈনিক ১১ লাখ ব্যারেলে নেমেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওপেক প্লাসের উত্তোলন কিছুটা বৃদ্ধি এবং শ্লথ চাহিদার কারণে চলতি বছরের বাকি সময়ে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক মজুদ লক্ষণীয় মাত্রায় বাড়বে।
জুনের পর থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমছে। এর পেছনে মূল কারণ সরবরাহ বৃদ্ধি। এছাড়া মৌসুমে নানা কারণ তো রয়েছেই। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কাও দাম কমার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে। তিন মাসে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৬৫ শতাংশ কমেছে। তবে অপরিশোধিত তেলের সরবরাহ বাড়ালেও ডিজেল ও জেট ফুয়েলের সরবরাহ অস্বাভাবিকভাবে সংকোচন অব্যাহত থাকবে।
জুন-আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহতভাবে জ্বালানি তেলের সরবরাহ চাহিদা প্রবৃদ্ধিকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। এ তিন মাসে সমুদ্রপথে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক রফতানি দৈনিক ১৩ লাখ ব্যারেল করে বেড়েছে, যা মোট চাহিদার থেকে ৩০ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে কৌশলগত পেট্রোলিয়াম মজুদ থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহ করার কারণে বাজারে দাম নিয়ে তৈরি উদ্বেগও কমেছে। প্রতিবেদনটিতে আইইএ জানায়, আগস্টে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক উত্তোলন বেড়েছে। উত্তোলনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দৈনিক ৭ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেলে। আর উত্তোলন বাড়াতে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকের সদস্য দেশ নাইজেরিয়ায় সম্প্রতি জ্বালানি তেল উত্তোলন তলানিতে নেমেছে। মূলত বিনিয়োগস্বল্পতা ও পাইপলাইন থেকে চুরির কারণে দেশটি উত্তোলন বাড়াতে পারছে না, পূরণ করতে পারছে না জোটের বেঁধে দেয়া কোটাও। এ পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক উত্তোলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত তাতে ভারসাম্য এনেছে। এদিকে ওপেকের বাইরে এবং ওপেক প্লাসের সদস্য রাশিয়া ও কাজাখস্তানের উত্তোলনও গত মাসে কমেছে বলে জানিয়েছে আইইএ। চলতি বছর দৈনিক ৪৮ লাখ ব্যারেল করে বৈশ্বিক উত্তোলন বাড়ার পূর্বাভাস রয়েছে। উত্তোলনের গড় পরিমাণ দাঁড়াবে দৈনিক ১০ কোটি ১ লাখ ব্যারেলে।
পরিচয়/সোহেল