এ অঞ্চলে চীনের উপস্থিতি নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন। পাশের দেশ শ্রীলংকায় চীনের নজরদারি করা জাহাজের উপস্থিতি নিয়ে সর্বশেষ উত্তেজনা দেখা দেয়। তা নিয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় গত মাসে। অনেকদিন ধরেই এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব বিস্তার নিয়ে অস্বস্তিতে ভারত। বিশেষ করে এই উদ্বেগ নিরাপত্তা নিয়েই বেশি। সেই নিরাপত্তা ইস্যুতে এবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সামিটে যোগ দিচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ১৫ থেকে ১৬ই সেপ্টেম্বর উজবেকিস্তানে হতে যাচ্ছে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সদস্যদের সামিট।
তাতে এই তিন নেতার সাক্ষাৎ হচ্ছে। এর অন্য সদস্যদের মধ্যে আছে পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলো। এবারের সামিটে চীন এবং পশ্চিমাদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং ইউক্রেন যুদ্ধ প্রাধান্য পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও স্পটলাইট থাকবে নরেন্দ্র মোদির ওপর। দৃষ্টি থাকবে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি’র সঙ্গে কি আলোচনা করেন।
এসসিওতে ব্যতিক্রমী অবস্থান দখল করে আছে ভারত। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে গঠিত কোয়াডেরও সদস্য ভারত। তা সত্ত্বেও ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তারা। পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞা দিলেও মস্কোর কাছ থেকে তেল কেনা বৃদ্ধি করেছে। এই সামিটের সাইডলাইনে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যাবেন মোদি, এমনটা আশা করা হচ্ছে। তবে ভারত সরকার এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়নি।
তবুও সামিটে তার উপস্থিতি সবার দৃষ্টি কাড়বে। কারণ, ২০২০ সালে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহিংস সংঘাত হয়। বিস্তৃত হিমালয়ের পাদদেশে সীমান্ত বিরোধে ভারতের কমপক্ষে ২০ জন সেনা সদস্য নিহত হন। অন্যদিকে চীন হারায় চার জন সেনাকে। তারপর এই প্রথমবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হতে যাচ্ছে মোদির। রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় এক বছর অচলাবস্থার পর সংঘাতের মূল পয়েন্টগুলোর একটিতে এ বিষয়ে দুই পক্ষ সবেমাত্র চতুর্থ রাউন্ডের আলোচনা সেরেছে।
অন্যদিকে এপ্রিলে পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী হওয়া শেহবাজ শরীফের সঙ্গে মোদির কোনো বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা হবে কিনা তা নিয়ে আছে জল্পনা। এই দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে এসসিও’তে তা নিয়মিত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এসসিও’র জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মিটিং থেকে ওয়াকআউট করে ভারত। তারা তখন বলেছিল, পাকিস্তান তার ভূখণ্ডের কাল্পনিক মানচিত্র উপস্থাপন করেছে।
এর মধ্যে যুক্ত করা হয়েছে ভারতীয় রাজ্য। বিশেষ করে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা ২০১৯ সালের আগস্টে ভারত বাতিল করার পর ভারত-পাকিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন মাত্রায় তলানিতে চলে আসে। ওই সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইমরান খান। তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত করেন। কিন্তু রিপোর্ট বলছে, সম্পর্কের এই বরফ গলতে পারে উজবেকিস্তানে। কারণ, পাকিস্তানে এখন ইমরান খান ক্ষমতায় নেই। সেখানে ক্ষমতায় নতুন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ।
এ বছর এপ্রিলে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য শুরু করার আগ্রহ প্রকাশ করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিকভাবে নিঃসঙ্গ এবং সংযোগচ্যুত করে রাখার জন্য ইমরান খানের সরকারের সমালোচনা করেন তিনি। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এই সামিটে পাকিস্তানের সঙ্গে অনেক বিষয়ের মধ্যে একটি বিষয়ে জোর দিতে পারে ভারত। তা হলো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই। এর আগে ইসলামাবাদকে দায়ী করে নয়া দিল্লি বলেছে, ভারতকে টার্গেট করে এমন সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে অর্থায়ন করে ইসলামাবাদ।
এ অঞ্চলে সন্ত্রাস কমিয়ে আনা এবং সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে ২০০১ সালে চীন, রাশিয়া, চারটি মধ্য এশিয়ার দেশ- কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান এবং তাজিকিস্তান মিলে গঠন করে এসসিও। এতে ভারত এবং পাকিস্তান যোগ দেয় ২০১৭ সালে। এ সময়ই প্রথমবার এসসিও’র আয়তন সম্প্রসারণ করা হয়। এ সময়ে ইরানকে পূর্ণাঙ্গ সদস্য করা হয়। পশ্চিমাদের জোট ন্যাটোর প্রভাবকে কাউন্টার দিতে এসসিও গঠন করা হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। এই গ্রুপে আছে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৪৪ ভাগ। এর বিস্তার আর্কটিক মহাসমুদ্র থেকে পূর্বে ভারত মহাসাগর হয়ে প্রশান্ত মহাসাগর এবং বাল্টিক সমুদ্র পর্যন্ত। এ অঞ্চলে বিশ্বের মোট প্রবৃদ্ধির শতকরা ৩০ ভাগের বেশি অর্জিত হয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ফোরামের কর্মকাণ্ড আঞ্চলিক নিরাপত্তা থেকে অন্যদিকে প্রসারিত করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে অর্থনীতি, বাণিজ্য এমনকি আইন প্রয়োগের বিষয়। এই জোটে এখনও প্রাধান্য বিস্তার করে আছে চীন এবং রাশিয়া। প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্র হিসেবে মধ্য এশিয়াকে বিবেচনা করে মস্কো। কিন্তু সেখানে আস্তে আস্তে বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক প্রবেশও লক্ষ্য করার। ফলে বিষয়টি নিয়ে এ অঞ্চলে রাজনৈতিক এক গুমোট ভাব দেখা দিয়েছে।
পরিচয়/সোহেল