সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে লংমার্চের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান। তবে এই কর্মসূচির চূড়ান্ত তারিখ এখনও ঘোষণা করেননি তিনি।
অবশ্য তারিখ ঘোষণা না হলেও লংমার্চে অংশগ্রহণকারীদের কঠোর ভাবে মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তানের বর্তমান সরকার। এ লক্ষ্যে ৪১০ মিলিয়ন রুপির একটি প্রাথমিক বাজেটও অনুমোদন করেছে শেহবাজ শরিফের সরকার। মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) লংমার্চে অংশগ্রহণকারীদের কঠোর হস্তে মোকাবিলা করার জন্য ৪১০ মিলিয়ন বা ৪১ কোটির রুপিরও বেশি অর্থের প্রাথমিক বাজেট অনুমোদন করেছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার দেশটির অর্থনৈতিক সমন্বয় কমিটি (ইসিসি) এই বাজেট অনুমোদন করে। এছাড়া পাকিস্তানের রপ্তানিকারকদের সস্তায় বিদ্যুৎ দেওয়ার সিদ্ধান্তকেও সমর্থন করেছে তারা। সোমবার পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারের সভাপতিত্বে ইসিসির ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলছে, পিটিআইয়ের লংমার্চ মোকাবিলা করার জন্য তহবিল বরাদ্দ চেয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো দু’টি পৃথক সারাংশ গ্রহণ করেছে ইসিসি। পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত ব্যয়ের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ৪১০.২ মিলিয়ন রুপির একটি সম্পূরক অনুদান অনুমোদন করেছে ইসিসি।’
মূলত সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের মোকাবিলায় প্রস্তুতির জন্য আনুমানিক খরচ হিসেবে ৪১০.২ মিলিয়ন রুপি অনুমোদন করা হয়েছে। যার মধ্যে ৩০ হাজার সদস্যের শক্তিশালী বাহিনী মোতায়েন, তাদের খাবার, পরিবহন, দাঙ্গা-বিরোধী নানা সরঞ্জাম সরবরাহ এবং বিক্ষোভকারীদের ওপর নজরদারির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সোমবারের বৈঠকে ইসিসিকে জানানো হয়, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে এবং কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য ইসলামাবাদ ক্যাপিটাল টেরিটরিতে বিশেষ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের জন্য বাইরের জেলা থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ৩০ হাজার কর্মীকে নিয়োজিত করার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া যানবাহন ও কন্টেইনার ভাড়ার জন্য ২৫৯ মিলিয়ন রুপি, (আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের) খাবারের জন্য ৩৫ মিলিয়ন রুপি, জ্বালানি খরচের জন্য ৩১.২ মিলিয়ন রুপি এবং দাঙ্গা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের জন্য ১৮ মিলিয়ন রুপি অনুমোদন করেছে ইসিসি।
একইসঙ্গে নিরাপত্তা কর্মীদের পাঁচ দিনের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য ২.৫ মিলিয়ন রুপি এবং নিরাপত্তা ক্যামেরাসহ এ সম্পর্কিত অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয় ও স্থাপনের জন্য আরও ৬৪.৪ মিলিয়ন রুপি মঞ্জুর করা হয়েছে।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলছে, পাকিস্তানের বিভিন্ন শহর থেকে ইসলামাবাদের দিকে লংমার্চের আকারে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে পিটিআই। যদিও পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান এখনও লংমার্চের চূড়ান্ত তারিখ দেননি তবে তার দলের কর্মীদের এই কর্মসূচির জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে ইমরান খানের লংমার্চ ঠেকাতে সেনাবাহিনী ডাকার এবং রাজধানী শহরে সেনা মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তানের ফেডারেল সরকার। মূলত পিটিআই প্রধান ইমরান খান সমাবেশের ডাক দিলে ইসলামাবাদে সেনা মোতায়েন করবে শেহবাজের সরকার।
সরকারি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে গত সপ্তাহে পাকিস্তানের প্রধান সারির সংবাদমাধ্যম দ্য ডন জানায়, বিক্ষোভকারীদের প্রবেশ বন্ধ করতে রাজধানী ইসলামাবাদের রেড জোনে পাকিস্তান সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। সেসময় পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বলেন, কোনো অবস্থাতেই পিটিআইকে ইসলামাবাদে প্রবেশ করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা।
উল্লেখ্য, গত এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দেশজুড়ে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করে আসছেন ইমরান খান। এসব সমাবেশে তিনি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়েছেন বলে অভিযোগ করে আসছেন। এ নিয়ে দেশটির রাজনীতিতে উত্তাপ বিরাজ করছে।
মূলত, আগামী বছরের অক্টোবরে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে নির্বাচনী সমাবেশ করছেন ইমরান খান। তার এসব সমাবেশ ঘিরে দেশটিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে রয়েছে। তবে ইমরান খান বলছেন, তার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে পড়েছে সরকার। মূলত পাকিস্তানে আগাম নির্বাচনের দাবিতে বর্তমান জোট সরকারের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলন জোরদারের চেষ্টা করছে পিটিআই।
পরিচয়/সোহেল